• শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ২ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইউএনও যাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে বাছাই শেষেই দিচ্ছেন ভাতার কার্ড    

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

আগে স্ব-চক্ষে দেখছেন। তারপর করছেন কাগজপত্র যাছাই বাছাই। এরপরও নিচ্ছেন উপস্থিত গ্রামবাসীদের মতামত। সবকিছু ঠিকঠাক পেলে,তবেই চূড়ান্ত করছেন সরকারী ভাতার কার্ড। এভাবেই দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মোঃ ইয়ামিন হোসেন পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে গিয়ে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের কার্ড বিতরণ করে চলেছেন।

প্রতিদিনই তিনি একেকটি ইউনিয়নে পৌঁছে কার্ড বিতরণের কার্যক্রম করছেন। তবে,কখনো সরকারী কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে তার দপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সরেজমিনে পাঠিয়ে বাছাই কাজ করান। ইউএনও ও উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তা মিলে পৌরসভাসহ প্রায় ১১ ইউনিয়নের ভাতা ভোগীদের কার্ড বিতরণের কাজ সম্পন্ন করেছেন। তার দক্ষ ব্যবস্থাপনায় প্রকৃতি দুঃস্থরা কার্ড পাওয়ায় এমন মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ গ্রামের সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামে ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানান, ইতোপূর্বে সরকারী সুবিধাভুগীদের তালিকা ও কার্ড বিতরণে নানা অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি করা হত। বর্তমান বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়ামিন হোসেন তিনি নিজে উপস্থিত থেকে যাছাই বাছাই করায় এখন প্রকৃতরাই কার্ড পাচ্ছেন।

গ্রামবাসীরা কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, ইতোপূর্বে কার্ড বিতরণে এমনও নজির আছে,যে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধাবাদী অনেকেই ওই কার্ড হাতিয়ে নিত। সেখানে প্রকৃত ভুক্তভোগীরা বঞ্চিত হত। এ বছর ইউএনও মহোদয় নিজে ইউনিয়নে এসে প্রকৃতদের কার্ড দেওয়ায় তারা বেজায় খুশি।

বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইয়ামিন হোসেন জানান, সমাজের প্রকৃত দুঃস্থ অসহায় মানুষকে সরকারী ভাতার কার্ড প্রদান নিশ্চিত করতেই তিনি ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন। এ কার্যক্রমে আগে থেকেই দুঃস্থদের আবেদন করতে ইউনিয়ন থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। এরপর নির্ধারিত দিনে ও অন্যান্য অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতেই আবেদনকারীদের বাছাই শেষেই কার্ড প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি জানান, ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫/৭ টি করে কার্ড বরাদ্দ আছে। কিন্তু কোথাও কোথাও বেশি আবেদন জমা পড়ায় সে ক্ষেত্রে তিনি উপস্থিত গ্রামবাসীদের সহায়তায় দুঃস্থ তালিকা সম্পন্ন করেন। এতে করে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের চিহ্নিত করা সহজ হচ্ছে।

ইউএনও আরো জানান, সরকারীভাবে অনেক আগে থেকেই স্বচ্ছতার মাধ্যমে ভাতার কার্ড প্রদান নির্দ্দেশনা থাকলেও এ বছর দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম এই কার্যক্রমে বেশি তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে মোতাবেক এ পর্যন্ত তিনি উপজেলার অন্যান্য অফিসারদের নিয়ে পৌরসভাসহ প্রায় সবকটি ইউনিয়নে উপস্থিত থেকেই এ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। তিনি পর্যায়ক্রমে বাকী ইউনিয়নেও উপস্থিত থেকে এ বাছাই কাজ সম্পন্ন করবেন বলে জানান।

গ্রামে মাইকিং শুনে ইউনিয়ন অফিস এসে লাইনে দাঁড়িয়ে ভাতা কার্ডপ্রাপ্ত ৫নং সুজালপুর ইউনিয়নের কুমরপুর গ্রামের অসহায় বৃদ্ধ তারা পদ্য মিস্ত্রি  সাংবাদিকদের জানান, বাড়ীর ভিটে মাটিটুকু ছাড়া তার আর কিছুই নেই।  ১ছেলে বাজারে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে। আর ১মেয়ে তার বিয়ে দিয়েছি। খুব কষ্টের মধ্যে পরিবারের দিন কাটত। আগে অনেকবার চেয়ারম্যান মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন ভাতার কার্ড পায়নি। এবারই মাইকিং শুনে লাইনে দাঁড়ানোর পর তাকে এই কার্ডটি দিয়েছেন। এতে সে বেজায় খুশি।

বীরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ সারোয়ার মোর্শেদ ইউএনওর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি দুঃস্থদের ভাতার কার্ড বিতরণে কখনো কোন অনিয়মকে প্রশ্রয় দেননি। তবে এ কার্ড পেতে এলাকার জনগণ তাদের কাছে অনেক সময় অন্যায় আবেদনও করে থাকে। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হত। এ দিকে এবারই গ্রামে গ্রামে ইউনিয়নে সঠিকভাবে যাছাই বাছাই করে প্রকৃতরা ভাতার কার্ড পাওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। তবে এ কার্যক্রমে কিছু কিছু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বাররা তাদের দলীয় বা কাছের অনুসারীদের কার্ড দিতে না পারায় অনেকেই বিপাকে পড়েছেন।