• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

কুড়িগ্রামে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০১৯  

কুড়িগ্রামে প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে দুধকুমর নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। বারদিন ব্যাপি এই কর্মযজ্ঞ চললেও সদর উপজেলা পরিষদের নাজির শফিকুল ইসলামের সাথে স্থানীয় সিন্ডিকেটের যোগসাজসের ফলে বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। এতে ভূমিধ্বস ও ভাঙন বিপর্যয়ে রয়েছে ১২০টি পরিবার। পাশাপাশি নদীর উপর পাইপ বসানোয় প্রতিদিন ঘটছে ছোটবড় নৌ-দুর্ঘটনা। এসব অব্যবস্থাপনার যেন কেউ দেখার নেই।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর বাজারের পাশে নুরানী পাড়ায় দুধকুমর নদীতে ড্রেজার বসিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। বন্যার পর প্রমত্ত ব্রহ্মপূত্র নদের মুখে বালু পরায় যাত্রাপুর বাজারে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এখন যাত্রাপুর বাজারের সাথে যোগাযোগের একমাত্র নৌপথ হল দুধকুমর নদী। শীর্ণকায় দুধকুমর নদী দিয়ে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী-উলিপুর-রৌমারী-চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলার তিন শতাধিক চরের মানুষ এই পথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ এই ভাঙন কবলিত এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় আতংকিত হয়ে পরেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। ২০১৮ সালে এই নুরানী ও ফারাজী পাড়া এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে দুধকুমর নদীতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও পাইলিং এর কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই নদীতে ও একই স্থানে ড্রেজার বসিয়ে গত ২১ আগস্ট থেকে বালু উত্তোলনের উদ্যোগ নেয় সিন্ডিকেটের লোকজন। ওই দিনই জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়।

প্রশাসনের নির্দেশে সেদিনই বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদের নাজির শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পাইপ সড়ানোর কথা বলেন। এসময় স্থানীয় অধিবাসী মনোয়ার হোসেন ড্রেজার মেশিনসহ সমস্ত মালামাল সড়িয়ে নেয়ার কথা বললে নাজির শফিকুল ইসলাম তাকে ধাক্কা দিয়ে চোটপাট করে বলেন, বেয়াদপ তুমি কথা বল কেন? আমি আছি না। তার এমন আচরনে সবাই ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। তার কথার ফলে ড্রেজার মেশিন সেখানেই রাখা হয়। পরে তিনি চলে গেলে রাতে ড্রেজার চালানো হয়। বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নজরে আসলে ২৬ আগস্ট সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় আগের দিন রোববার সারারাত ধরে মেশিনটি চলেছে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে দেয়া হলেও নাজির শফিকুল ইসলামের কারণে ড্রেজারটি সড়ানো হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবারো মেশিনটি চালু অবস্থায় পাওয়া যায়।

এলাকার ছোলেমন, মোতালেব, কাদের, ছুরৎজামাল ও আজিজুল জানান, ঠিকাদাররা পাশর্^বর্তী চাকেন্দা খানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবনির্মিত চারতলা ভবণে বালু তোলার জন্য ড্রেজার দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে এসব বালু।

এসময় ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হয়ে বালু ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও স্কুল কমিটির প্রভাবশালীদের নির্দেশে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। 

নৌকার মাঝি যাত্রাপুরের এনামুল, দৈ-খাওয়ার চরের মাহালম, চর যাত্রাপুরের কামাল জানান, ড্রেজারের পাইপের কারণে নদী পারাপারে অতিরিক্ত সময় লাগে ৩০/৪০ মিনিট। মুখোমুখী সংঘর্ষষের ঘটনাসহ নানা দুঘর্টনা ঘটছে।

এ ব্যাপারে যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, নদী তীরে ড্রেজার বসানোর পর গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মূখে মেশিন সড়ানো হয়েছে। আবার তারা নদীর অপর পাড়ে মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে। এটিই এখন মূল নদী। পাইপ বসানোয় নৌকা চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা।

বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিনকে মোবাইলে অভিযোগের কথা বললে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান,  আপনি বলছেন বালু তুলছে। কিন্তু আমাদের লোক বলছে মেশিন সড়ানো হয়েছে। এখন কার কথা বিশ্বাস করবো।