• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

কুড়িগ্রামে পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানী তেলসহ এলপি গ্যাস উদ্ভাবন

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

কুড়িগ্রামে পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল এবং এলপি গ্যাস উৎপন্ন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে রোস্তম আলী নামে এক শিক্ষার্থী। তার এই আবিষ্কারে হৈ-চৈ পরেছে এলাকায়। আবিস্কারের কথা জানতে পেরে তার বাড়ীতে প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছে দূর-দূরান্তের মানুষ। রোস্তমের এই সাফল্যে অভিভূত উপজেলা প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে সহযোগিতার। 

জানা যায়, জেলার রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের বালাকান্দি গ্রামের কৃষক মৃত: মফিজুল হকের ছোট পূত্র রোস্তম আলী। অনিসন্ধিচ্ছু এই তরুণের প্রথম নজরে আসে শীতকালে খড়কুটো এবং পলিথিন পুড়িয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে। লক্ষ করেন পলিথিনগুলো পুড়ে গিয়ে ফোঁটা ফোঁটা তরল পদার্থ বের হচ্ছে। সেই চিন্তা থেকে ২০১৭ সালে পলিথিন নিয়ে শুরু করেন গবেষণা। ছোট টিনের কৌটায় পলিথিন পুড়িয়ে তরল পদার্থ বের করে পান প্রথম সাফল্য। 

এরপর টানা তিন বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিস্কার করেন শোধনকৃত ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও এলপি গ্যাস।  এখন তার বাড়িতে ঢুকলেই বাড়ির আঙিনায় একটি মুখ ঢাকা খালি তেলের ড্রামের সাথে পাইপের মাধ্যমে একটি বোতল এবং দু’টি জেরিকেন সংযোগ দেয়া হয়েছে। খালি ড্রামের ভেতর বেশ কিছু পলিথিন ভরিয়ে ড্রামের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ড্রামের তলায় আগুন জ্বালিয়ে উচ্চ তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পলিথিন গলানো হয়। এভাবে প্রায় ২০/৩০মিনিট ধরে তাপ দেয়ার পর পলিথিনগুলো গলে গিয়ে বাষ্পাকারে পাইপের মাধ্যমে বোতলে ফোঁটায় ফোঁটায় জমা হতে থাকে। আর এভাবেই উৎপন্ন হয় ডিজেল, পেট্রোল অকটেন। জেরিকেনের মধ্যে অপর একটি পাইপ দিয়ে বের করা হয় এলপি গ্যাস। যা দিয়ে সে অনায়াসে প্লাষ্টিক পোড়ানো কাজ করা যায়। উৎপাদিত জ্বালানি তেল দিয়ে রোস্তম আলী নিজস্ব মটর সাইকেলে ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি গ্রামবাসী ও বন্ধু-বান্ধবদেরকেও দিচ্ছেন। 

এসব উৎপাদিত জ্বালানী তেল ছাকন এবং থিতানো পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতি কেজি পরিষ্কার পলিথিন হতে ৯শ গ্রাম এবং অপরিষ্কারযুক্ত পলিথিন হতে ৬/৭শ গ্রাম জ্বালানী তেল উৎপাদিত হচ্ছে। এতে খরচ প্রায় ৩০টাকা। রোস্তম আলী যে আবিষ্কার করেছেন তাতে করে এই এলাকায় আর পলিথিন নেই বললেই চলে। বছর খানেক থেকে রোস্তমের কাছ থেকে তেল নিয়ে দৈনন্দিন কাজ সারছে এলাকার মানুষজন। এতে করে কোন সমস্যায় পরতে হয়নি। এখন সরকারি বেসরকারিভাবে রোস্তমকে সহযোগিতা করলে এর সুফল দেশের মানুষ পাবে বলে আশা স্থানীয়দের। 

এ ব্যাপারে উদ্ভাবক রোস্তম আলী জানান, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার সুযোগ না পেলেও প্রাথমিকভাবে নিজেই পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছি। আমার এ উদ্ভাবনে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে জ্বালানীখাতে নতুন মাত্রা যোগ করার পাশাপাশি পলিথিনের অপব্যবহারে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে সেটি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

রাজারহাট পান্থাবাড়ী দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহাবুবুল আলম জানান, রোস্তমের এমন আবিষ্কারে আমরা গর্বিত। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জ্বালানী চাহিদা পূরণে তার আবিস্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানান তিনি।

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহ: রাশেদুল হক প্রধান জানান, আমি সরেজমিনে রোস্তমের আবিষ্কার দেখে কিছুটা ব্যতিক্রম উদ্যোগ বলে মনে করছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। রোস্তম আলী সহযোগিতা চাইলে উপজেলা প্রশাসন থেকে দেয়া হবে বলে আশ্বাসদেন।া