• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফুলবাড়ীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন নিরব ভুমিকায় প্রশাসন

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছোট্ট যমুনা নদী থেকে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করলেও নিরব ভুমিকায় রয়েছে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে নদীর বিভিন্ন এলাকায় বালু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত বালু উত্তোলন করায়, নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে নদীর গ্রামরক্ষা বাধসহ ফসলী জমি। শুধু তাই নয়, বালু ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামত বালুর দাম নেয়ায় তাদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে, বালু বহনকারী ট্রাক্টর মালিক-শ্রমিকসহ সাধারন মানুষ।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের ছোট যমুনা নদীর রাজারামপুর মৌজার বেলতলী ঘাট ও গোপালপুর ঘাট বালুমহল হিসেবে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বালুমহল ইজারাদার ইমরুল হুদা চৌধুরী ইনু, বেলতলী ও গোপালপুর ঘাট ছাড়াও, উপজেলা শিবনগর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদ ঘাট, মৎসর বীল থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিদারছে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়া উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মহদিপুর ঘাট, জমিদারপাড়া ঘাট, দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া ঘাট, জানিপুর ঘাটে সাব-ইজারাদার নিয়োগ করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইচ্ছামত বালু উত্তোলন করছে। বারাইপাড়া ঘাটের বালু উত্তোলনকারী বাবলু মিয়া বলেন প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা চুক্তিতে, বালুমহল ইজারাদার ইনুর নিকট থেকে তিনি বারাইপাড়া ঘাট সাব-ইজারা নিয়েছেন, একই কথা বলেন খয়েরবাড়ী ইউপির মহদিপুর ঘাটের বালু উত্তোলনকারী মুরাদ হোসেন । জমিদারপাড়া ঘাটের বালু উত্তোলনকারী মতিয়ার রহমান বলেন, জমিদার পাড়া ঘাট থেকে বালু উত্তোলনের জন্য প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা করে দিতে হয় বালুমহলের ইজারাদার ইমরুল হুদা চৌধুরী ইনুকে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বালুমহল ইজারাদার ইমরুল হুদা চৌধুরী বলেন, মাত্র দুটি ঘাট থেকে বালু উত্তোলন করে ইজারা মূল্য পরিশোধ করা কঠিন, তাই তিনি ওইঘাট গুলো সাব-ইজারা প্রদান করেছেন।

এদিকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদী গর্ভে ভেঙ্গে পড়েছে বন্যার হাত থেকে গ্রামরক্ষার বাধসহ ফসলী জমি। জাফরপুর গ্রামের বাসীন্দা প্রভাষক হামিদুল হক বলেন, বালু উত্তোলনের কারনে গত বছরে বন্যায় তাঁর প্রায় এক একর ফসলী জমি নদীতে বিলিন হয়ে পড়েছে, এই বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। একই কথা বলেন খয়েরবাড়ী জমিদার পাড়া গ্রামের আফছার আলী। খয়েরবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এনামুল হক বলেন জমিদার পাড়া ঘাটে যে ভাবে বন্যার হাত থেকে গ্রামরক্ষা বাঁধটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাতে আগামী বন্যায় গ্রামের বাড়ী-ঘর ও মাঠের ফসল সবেই নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। রাজারামপুর গ্রামের আবু বক্কর বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে তার এক বিঘা জমি ইতোমধ্যে নদীতে চলে গেছে, এখন যে ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে আগামী বন্যায় তার পাশের জমিটিও নদীতে চলে যাবে।

এদিকে বালু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্চামত বালুর দাম নিদ্ধারণ করে, জিম্মি করে ফেলেছে বালু বহনকারী ট্রাক্টর মালিক শ্রমিকদের। ট্রাক্টর মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মকলেছার রহমান সরকার নবাব বলেন গত কয়েক দিন পুর্বেও ৩৫০ টাকায় এক ট্রাক্টর বালু ঘাট থেকে নেয়া হলেও, এখন বালুর ইজারাদার এক ট্রাক্টর বালুর দাম নিদ্ধারন করেছে ৭০০ টাকা, এতেকরে তাঁরা উন্নয়নমুলক প্রকল্পে বালু সরবরাহ করতে পারছেনা। ট্রাক্টর মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্ঠা অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বালু ইজারাদারের দৌরাত্বে জিম্মি হয়ে পড়েছে ট্রাক্টর মালিক ও শ্রমিকরা, বালু ইজারাদার এক মাস পরপর বালুর দাম বৃদ্ধি করছে, এতে উন্নয়ন মুলক কাজের ব্যায় বাড়ছে। এলজিইডির ঠিকাদার  মনোজ মল্লিক বলেন বালুর দাম হঠাৎ বৃদ্ধি করায় তার ঠিকাদারী কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছে, তিনি বলেন টেন্ডারে যে বালুর যে দাম ধরা রয়েছে বালু মহল ইজারাদার তার থেকে অনেকগুন বেশি দাম চাওয়ায় তিনি বালু নিতে পারছেনা।

ইজারা ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন ও বালুমহল ইজারাদারের দৌরাত্বর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অ্ল্প সময়ের মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে।

এদিকে গ্রামবাসীরা বলেন কয়েক বছর থেকে বালুর ইজারাদার তার ইচ্ছামত বালু উত্তোলন করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি উপজেলা প্রশাসন।
এই বিষয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কেউ অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করতে পারবেনা। তিনি অল্পসময়ের মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান করবেন বলে জানান। অবৈধ স্থান থেকে যারা বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন তা রহসজনক।