• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

লালমনিরহাটের স্কুলে ভাউচার কেলেঙ্কারিঃ মূল দা‌মের ১৫গুণ আদায়!

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০১৯  

বালিশ ও পর্দা কাণ্ডের পর এবার ফাঁস হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আজব বিল ভাউচার কাণ্ড। বাজারে একটি বৈদ্যুতিক সুইচের দাম সর্বোচ্চ ৩০ টাকা, একটি ১২ ওয়াটের এলইডি বাল্বের দাম সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা, দেড় হর্সের একটি পানির পাম্পের দাম সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। অথচ আজব বিল ভাউচারে বৈদ্যুতিক সুইচের দাম ৪৫০ টাকা, বাল্বের দাম ৮৫০ টাকা আর একটি পাম্পের দাম ২৫ হাজার টাকায় কেনার মূল্য দেখানো হয়েছে।

শুধু তাই নয়, বিদ্যালয় ভবনটির নব-নিমির্ত রঙ্গিন টিনশেটের হলেও ডিসেম্বরে চার ড্রাম রংয়ের নামে ৩২ হাজার টাকা ব্যয় ভাউচারে দেখানো হয়েছে। এভাবে দুই লাখ টাকার আজব বিল ভাউচার উপজেলা হিসাব রক্ষক অফিস থেকে পাস করা হয়েছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার খোর্দ্দ বিছনদই মাহাতাব উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিইডিপি-৪ প্রকল্পের মেরামতের ভাউচারে এমন আজব তথ্য পাওয়া গেছে।

পাসের সদ্য জাতীয়করণকৃত কেতকীবাড়ি পাইকারটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ওই বিদ্যালয়ের নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে বলা হয়েছে, লোহার এঙ্গেল ব্যবহারের পাশাপাশি মান সম্পন্ন টিন দিয়ে শ্রেণিকক্ষ তৈরি করতে হবে। কিন্তু লোহার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের পাশাপাশি প্রচলিত .০৪৬০ মি. মি. টিনের পরিবর্তে অতি নিম্নমানের .০১৪০ মি. মি. ঢেউটিন ব্যবহার করা হয়েছে। দুই মাসেই সেই টিন ছিদ্র হয়ে সব শ্রেণিকক্ষে বৃষ্টির পানি পড়ছে। ফলে পানিতে ভিজে পাঠগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা।

পিইডিপি-৪ ও রাজস্ব বাজেটের আওতায় দুটি প্রকল্পের মেরামতের অনিয়মের চিত্র শুধু দুই বিদ্যালয়েই নয়। হাতীবান্ধা উপজেলার ৩৭টি বিদ্যালয়ে দুই প্রকল্পে দেড় লাখ ও দুই লাখ টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছে। অধিকাংশ বিদ্যালয় নামমাত্র কাজ করে বিল-ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় হাতীবান্ধা ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই লাখ টাকা করে ও রাজস্ব খাত প্রকল্পের আওতায় ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় লাখ টাকা করে ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। গত অর্থ বছরের জুন ক্লেজিং’র আগে প্রতিটি বিদ্যালয় কাজ শেষ করে বিল-ভাউচার জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও হাতীবান্ধায় তা মানা হয়নি। জুন ক্লোজিং’র সময় বিল-ভাউচার জমা দিয়ে টাকা ব্যয়ের বৈধতা পেলেও ওই টাকার একটি অংশ এখনো উত্তোলন করা হয়নি। এছাড়া খোর্দ্দ বিছনদই মাহাতাব উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বের কারণে বরাদ্দকৃত দুই লাখ টাকা এখনো উত্তোলন করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, বরাদ্দের টাকা তুলতে উপজেলা পর্যায়ে কিছু টাকা দিতে হচ্ছে বলে প্রধান শিক্ষকরা দাবি করছেন। বাকি টাকা দিয়ে নামমাত্র কাজ করে স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকরা ভাগাভাগি করছেন। এছাড়া বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিদ্যালয়ভিত্তিক প্রতি বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র মেরামত, রুটিন মেইনটেনেন্স, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ সজ্জিতকরণ ও উপকরণ ক্রয় বাবদ রয়েছে। গোটা বিষয়াদি তদন্ত করলে অনিয়ম বের হবে।

হাতীবান্ধা উপজেলার কেতকীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ গড্ডিমারী পল্লী শ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের সঙ্গে বাস্তবায়ন কাজের কোনো মিল নেই। দক্ষিণ গড্ডিমারী পল্লী শ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলার রহমান শতভাগ কাজ হয়েছে বলে দাবি করলেও কি কি কাজ হয়েছে এবং কাজের ভাউচার দেখাতে পারেননি।

খোর্দ্দ বিছনদই মাহাতাব উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস চন্দ্র কর্মকার বলেন, একজনের মাধ্যমে বিল ভাউচারটি করে নিয়েছি। আমি আগেও সেভাবে দেখি নাই। এখন দেখে নিজেই বিব্রত হয়ে পড়েছি। আর কেতকীবাড়ি পাইকারটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক দোলেয়ার হোসেন বলেন, প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করতে আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। তাছাড়া নতুন ভবন হবে তাই সাময়িক শ্রেণিকক্ষ তৈরি করেছি।

হাতীবান্ধা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সোলেমান মিয়া বলেন, কাজ শেষে পরিচালনা কমিটির রেজুলেশন জমা দিয়ে বাকি টাকা তোলতে প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে। কিন্তু তারা রেজুলেশন নিয়ে না আসলে কিভাবে টাকা দেবো?

হাতীবান্ধার ইউএনও সামিউল আমিন জানান, কয়েকটি বিদ্যালয়ের কাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।