• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

ক্রাচে ভর দিয়ে প্রতিমা বানিয়ে চলেছেন চিত্ত রঞ্জন

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০১৯  

জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী দিনাজপুরের চিত্ত রঞ্জন রায়। চলাফেরা করেন ক্রাচে ভর দিয়ে। এ অবস্থায় কারও কাজ করে আয় রোজগার ও সংসার চালানো সাধারণত বেশ কঠিন ব্যাপার। কিন্তু ইচ্ছাশক্তির বলে নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন তিনি। শুধু নিজের না, আয় রোজগারের পথ উন্মোচিত করেছেন আরও কয়েকজনের। ২২ বছর ধরে প্রতিমা বানিয়ে চলেছেন তিনি। চিত্ত রঞ্জন এখন একজন সফল প্রতিমা কারিগর, যার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

দিনাজপুরের সদর উপজেলার কিসমত মাধবপুর এলাকার বাসিন্দা চিত্ত রঞ্জন। দক্ষ প্রতিমা তৈরির কারিগর হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। যার কারণে বছর জুড়ে ব্যস্ততা থাকে তার। তবে দুর্গোৎসব আসলেই তার ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

চিত্ত রঞ্জন রায় জানান, জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী তিনি। চলাফেরা করেন ক্রাচে ভর দিয়ে। তিনি সবসময় ভাবতেন কী কাজ করে জীবন চালাবেন। সেই থেকে প্রতিমা কারিগরদের কাজ দেখে নিজে নিজেই শিখে ফেলেন। এরপর থেকে গত ২২ বছর ধরে এই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

চিত্ত রঞ্জন রায় জানান, জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী তিনি। চলাফেরা করেন ক্রাচে ভর দিয়ে। এ অবস্থায় কীভাবে সংসার চালাবেন তাই ভাবতেন সবসময়। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া অবস্থায় বাড়ির পাশে দুর্গা প্রতিমা বানানো দেখে মনে মনে স্থির করেন এই কাজটিই করবেন তিনি। এরপর নিজে নিজেই প্রতিমা বানানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দক্ষ হয়ে ওঠেন এই কাজে। অবশেষে ইচ্ছাশক্তি ও কাজ দেখে পরিবারও তাকে উৎসাহ দেয়, হয়ে যান প্রতিমা তৈরির কারিগর।

চিত্ত রঞ্জন আরও জানান, প্রতিবছর সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মীপূজা, মনসাপূজা, কালীপুজা, গনেশপূজাসহ বিভিন্ন পূজায় প্রতিমা বানিয়ে সংসার চালান তনি। তবে তার সবচেয়ে ব্যস্ততা বাড়ে দুর্গা পূজা আসলে। এই সময়ে তার উপার্জনও বেশি হয়। একাধিক মণ্ডপে প্রতিমা বানাতে গিয়ে রাত-দিন পরিশ্রম করতে হয় তাকে। দীর্ঘদিন বাড়িতেও যাওয়া হয় না তার।

এলাকার বিমল চন্দ্র রায় জানান, এখন চিত্ত রঞ্জনের অনেক সুনাম। প্রতিবন্ধী হয়েও এত সুন্দরভাবে তার প্রতিমা তৈরির কাজ অনেকেই দেখতে আসেন। এটা গর্ব করার মতো ব্যাপার।

চিত্ত রঞ্জন রায়ের সহকারী কারিগর হিসেবে কাজ করেন যুগল চন্দ্র রায়, শ্যামল কুমার রায়, তরুণ কুমার রায়সহ আরও কয়েকজন। সাধারণত দুর্গা পূজার কাজ হয় দেড় থেকে দুই মাস ধরে। কাজের মান, অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রতি কারিগর ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক পারিশ্রমিক পান বলে তারা জানান।

কারিগর সহকারী যুগল চন্দ্র রায় বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর ধরে উনার (চিত্ত রঞ্জন) সঙ্গে কাজ করছি। তিনি যেমন একজন ভালো প্রতিমা কারিগর তেমনি একজন ভালো মানুষ। তার সঙ্গে থেকেই এখন আমার সংসার চলছে।’

দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার গুঞ্জাবাড়ী দুর্গা মণ্ডপ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার রায় বলেন, ‘প্রায় কয়েক বছর আগে চিত্তরঞ্জন এই মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। এরপরে অনেকেই এখানে প্রতিমা তৈরি করেছেন কিন্তু কমিটি ও এলাকাবাসীর তেমনটা পছন্দ হয়নি। তাই এবারে আবারও চিত্ত রঞ্জনকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।’

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা দিনাজপুর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক যাদব চন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রতিবন্ধীদের আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য হস্তশিল্পের কাজের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। হস্তশিল্পের কাজ করলে প্রতিবন্ধীরা বোঝা না হয়ে যে দেশের সম্পদেও পরিণত হতে পারে তার জলন্ত উদাহরণ চিত্ত রঞ্জন রায়।’