• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

দুই খাল সাঁতরে স্কুলে যায় অদম্য তসলিমা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০১৯  

অদম্য শিক্ষার্থী তসলিমা খাতুন। তার এ বয়সের শিক্ষার্থীরা একটু সুযোগ পেলেই স্কুল পালায়। অথচ সে লেখাপড়ার জন্যে মেনে নিতে পারে যেকোনো কষ্ট। তাই বিদ্যালয়ে যেতে তাকে সাঁতার কেটে পার হতে হয় দুটি খাল।

তসলিমার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর অনুপনগরের নতুনপাড়া গ্রামে। সে চর অনুপনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টি। তাই প্রতিদিন আসা-যাওয়ায় তাকে পাঁচ কিলোমিটার চলাচল করতে হয়।

সপ্তাহখানেক আগে ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় পানি বেড়ে যায় পদ্মা ও মহানন্দা নদীর। ফলে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো। মহানন্দার পানি বাড়ায় ওই এলাকার অগভীর দুটি খাল ভরে গেছে। প্রায় ৩০০ ফুট প্রশস্ত খাল দুটি সাঁতার কেটে স্কুল যাওয়া তসলিমার রুটিন। পুরো পথ তাকে হেঁটে ও সাঁতার কেটে পাড়ি দিতে হয়।

স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি পাত্রে ইউনিফর্ম, বই-খাতা ভরে খালের পানিতে ভাসিয়ে দেয়। এরপর খালের তীরে পৌঁছানো পর্যন্ত সাঁতার কাটতে থাকে। একইভাবে পরবর্তী খালটি অতিক্রম করে। এরপর স্কুলে গিয়ে ইউনিফর্ম পরে ক্লাস করে। স্কুল ছুটির পর আবার ভেজা কাপড়টি পরে খাল পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরে।

তসলিমা জানায়, গরিব ঘরে জন্ম আমার। সংসারে আট ভাই-বোন। বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু তার আয়ও খুব বেশি না। তিন বোনের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে। তাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায় তসলিমা। তার স্বপ্ন চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে।

তসলিমার বড় বোন নাসিমা খাতুন বলেন, বাবা-মা না থাকায় অল্প বয়সে বিয়ে হয়। কিন্তু তসলিমার লেখাপড়ার আগ্রহ রয়েছে। আমরা চাই লেখাপড়া করে সফলতা লাভ করুক।

অনুপনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন বলেন, তসলিমাকে কোনো দিন ক্লাস মিস করতে দেখিনি। খাল বেয়ে ওঠার পরও সে নিয়মিত ক্লাস করছে। যে কারো পক্ষে প্রতিদিন দুই বার খাল পার হওয়া দুষ্কর।