• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজীউ মন্দির স্থাপত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০১৯  

উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরের স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন। শ্রী শ্রী কান্তজীউ মন্দির কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ঢেপা নদীর তীরে কান্তনগরে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। টেরাকোটা অলঙ্করণ বৈচিত্র্য এবং ইন্দো- পারস্য স্থাপনা কৌশল অবলম্বনে কান্তজীউ মন্দিরটি নির্মিত। শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ -বিগ্রহ অধিষ্ঠানের জন্য মন্দিরটি নির্মিত হয়। এর অবস্থান শ্যামগড় এলাকায় হলেও বিগ্রহের নামানুসারে নাম দেওয়া হয় কান্তনগর। মন্দিরের উত্তরের ভিত্তি বেদির শিলালিপি থেকে জানা যায়,মহারাজা প্রাণনাথের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে মন্দিরটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মহারাজার দত্তক পুত্র রাজ রামনাথ ১৭৫২ খ্রি, এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন। প্রায় এক মিটির উঁচু এবং ১৮ মিটির বাহুবিশিষ্ট বর্গাকার বেদির ওপর মন্দিরটি নির্মিত। ইটের তৈরি মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার। তিনতলা বিশিষ্ট এ মন্দিরের নয়টি চূড়া রয়েছে। এজন্য এটাকে নবরত্ন মন্দির বলা হয়।

শুরুতে কান্তজীউ মন্দিরের উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালে কান্তজীউ মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। পরে রাজা গিরিজনাথ মন্দিরের সংস্কার করলেও এর চূড়াগুলো আর নির্মাণ করা হয়নি। মন্দিরের প্রাঙ্গণ আয়াতকার হলেও পাথরের ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। এর পরিমাণ ১৯.২০ গুণ ১৯.২০ বর্গামিটার। মন্দিরটি ১৫.৮৪ গুণ ১৫.৮৪ বর্গমিটার আয়তনের একটি বর্গাকার ইমারত। প্রতিটি তলার চারপাশে বারান্দা রয়েছে। মন্দিরের টেরাকোটা চিত্রে রামায়ণ ও মহাভারতের ঘটনা সংবলিত চিত্র ও মোঘল আমলের বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মন্দিরের পশ্চিম দিকে দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। এর নিচতলায় ২৪ টি, দ্বিতীয় তলায় ২০টি এবং তৃতীয় তলায় ১২টি দরজা রয়েছে।ধারণা করা হয়, কান্তজীউ মন্দির নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর আনা হয় হিমালয়,আসামের পার্বত্যা ল ও বিহারের রাজ মহল পাহাড় থেকে। এ ছাড়া ইট-বালু টেরাকোটা ও কঠিন পাথরের সংমিশ্রণে এটি মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক বুকানন হ্যামিলটনের মতে, কান্তজীউ বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম মন্দির। দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেট বর্তমানে মন্দিরটি দেখাশোনা করে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মন্দিরটি দেখাশোনায় সহযোগিতা করে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় মন্দিরটির সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।