• শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ২ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী 

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুটিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিদ্যমান কিছু সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সতর্ক নজর রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তার সরকার এসব সামাজিক অভিশাপ নির্মূল করতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে যাবে।

রোববার সকালে মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি ২০১৯-২০২০ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।-বাসস
শেখ হাসিনা বলেন, সমাজে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির মতো কিছু সামাজিক অভিশাপ রয়েছে। আমি এসব বিষয়ে আপনাদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছি।

সমাজের বিদ্যমান সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান পরিচালনায় সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা এরইমধ্যে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছি। অপরাধ বিরোধী এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সমাজকে রক্ষা করার জন্য এ ধরনের অভিশাপ নির্মূল করা জরুরি। কারণ আমরা আমাদের সন্তানদের জীবন ধ্বংস করার কোনো সুযোগ দিতে চাই না।

তিনি একইসঙ্গে বলেন, তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে সারাবিশ্বের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারে তেমনই একটি আধুনিক ও সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার তরুণদের মেধা, জ্ঞান এবং শক্তি দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে চায়।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সশস্ত্রবাহিনীকে এমনভাবে উন্নত করতে চাই যাতে তারা যেকোনো দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্তি রক্ষায় কাজ করে যেতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পৃথিবীর যেখানে কাজ করেছে সেখানেই সুনাম অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মানবিক সেবা দিয়ে বিভিন্ন দেশে স্থানীয় মানুষের হৃদয় জয় করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

অনুষ্ঠানে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. এনায়েত উল্লাহ স্বাগত বক্তৃতা করেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২৫ জন, নৌবাহিনীর ৩৪ জন এবং বিমান বাহিনীর ২২ জন ছাড়াও ২১টি দেশ থেকে আগত ৫৪ জন বিদেশি কর্মকর্তাসহ মোট ২৩৫ জন শিক্ষার্থী এ বছর এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন।

উল্লেখ্য, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যপর্যায়ের নির্বাচিত কর্মকর্তাদের কমান্ড স্টাফ হিসেবে ভবিষ্যতের গুরু দায়িত্ব পালনে দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এ প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ‘ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কলেজে’ সেনাবাহিনীর ৪৪টি, নৌবাহিনীর ৩৮টি এবং বিমানবাহিনীর ৪০টি স্টাফ কোর্সে ৫ হাজার ২৫৩ জন সাফল্যের সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এরইমধ্যে ৪২টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ১ হাজার ১৬৫ জন কর্মকর্তা এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন করা অফিসারদের হাতে সনদ তুলে দেন।

২১টি দেশের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিয়েরা লিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুদান, তানজানিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা ও জাম্বিয়া।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের পিএসও সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

‘সশস্ত্র বাহিনীকে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা একটি আধুনিক সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লার সামরিক একাডেমিতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত জাতির পিতার ভাষণের বিশেষ কিছু অংশ উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের ছেলেরা যে কোনো দেশের যে কোনো সৈনিকের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে। আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি একাডেমি সৃষ্টি করব, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমি দেখতে আসবে। আজকে এটা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে অনেকটা ছোট পরিসরে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করলেও তা আজকে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। 

সরকার প্রধান বলেন, শুরু করলে যে পারা যায়, আমরা তা প্রমাণ করেছি। 

প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খণ্ড চিত্র তুলে ধরে বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা স্থান করে নিতে পেরেছে। আশা করি- ২০ দশমিক ৫ ভাগ থেকে দারিদ্রের হার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে নামিয়ে এনে বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র মুক্ত হিসেবে ঘোষণা দিতে পারবো। ‘মুজিববর্ষে’ দেশের সব ঘরে তার সরকার বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে সক্ষম হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নেও আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি- আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণসহ সর্বক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করতে পেরেছে। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা যে প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করে যান সেই আলোকেই তার সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

লাখো শহীদ যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল সেই চেতনাতেই বাংলাদেশকে তার সরকার এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তোরণ করেছি এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেজন্য তার সরকার ৫ বছর মেয়াদি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর মেয়াদি পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এবং আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেয়ার জন্য শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর অনেকগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ওপর ন্যস্ত রয়েছে উল্লেখ করে কোর্স সমাপনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার বিশ্বাস- আপনাদের প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান, আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল করে তুলবে। আর দেশের সার্বিক উন্নয়নের দিকেও আপনারা দৃষ্টি দেবেন, যাতে আমরা দেশটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। 

তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে লক্ষ্য তা বাস্তবায়নে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।

কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’-এর উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা চাই আপনারাও (বিদেশি শিক্ষার্থীরা) আমাদের বন্ধু হিসেবে থাকবেন এবং সেদেশে বাংলাদেশের একজন গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বাংলাদেশকে কখনো ভুলবেন না, সেটাই আমরা চাই। 

কোর্সে অংশগ্রহণকারী সব সদস্য এবং তাদের পরিবার-পরিজন এবং ডিএসসিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার শততম জন্মদিন, ১৭ মার্চ ২০২০ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে উদযাপন করব। ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ মার্চ ২০২১ সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছি। ইউনেস্কো আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী সারাবিশ্বে উদযাপন করবে। 

তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জাতীয় আকাঙ্খায় সশস্ত্র বাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে আজকের গ্র্যাজুয়েটরা যথাযথ ভূমিকা রাখবে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বের দরবারে আরো সমুন্নত ও সমুজ্জ্বল করবে।