• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

বাংলাদেশ বিষয়ে ট্রাম্পকে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিলেন প্রিয়া সাহা

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০১৯  

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন প্রিয়া সাহা নামে এক নারী। ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে মিথ্যা এবং বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে চারদিকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই নারীর সমালোচনায় সরব হয়েছেন সবাই।

প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাতের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে পুরো দেশে সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হওয়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত বুধবার সেখানে নিউজিল্যান্ড, মিয়ানমার, ইয়েমেন, কিউবা, চীন তুরস্ক, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া, ভিয়েতনাম, সুদান, নাইজেরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ইরান ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের ২৭ জন নির্যাতিত ব্যক্তি অংশ নেন। এই সাক্ষাতেই ছিলেন বাংলাদেশের প্রিয়া সাহা।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশ বিষয়ে মিথ্যাচার করছেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে অভিযাগ করে বলছেন, বাংলাদেশে ৩৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধকে গুম (ডিজএপিয়ার), খুন ও হত্যা করা হয়েছে। তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে ও জমি-জমা-সম্পদ দখল করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্পের কাছে নিজেসহ বাংলাদেশের ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা চেয়ে আকুতি জানাচ্ছেন তিনি। প্রেসিডেন্টের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা আরো অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে এসব নির্যাতন করছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মুসলিম মৌলবাদীরা।

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এ অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি। বাংলাদেশি এ নারীর মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে নালিশ একটি চক্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, অভিযোগের কারণ খতিয়ে দেখা হবে।

অপরদিকে ভিডিওটি ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জন মন্তব্য করেছেন, প্রিয়া সাহা নির্মম মিথ্যাচার করেছেন। যা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের সামিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, এ মহিলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানকে হত্যা, গুম বা খুন করা হয়েছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে জায়গা দখল করেছে বলে তিনি যে নিরাপত্তার আকুতি জানিয়েছেন তা একেবারেই মিথ্যা। তিনি ট্রাম্পের কাছে এসব অভিযোগ করে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রিয়া সাহার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার চরবানিরীর মাটিভাঙ্গা নাজিরপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, থাকতেন রোকেয়া হলে। মহিলা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি রানা দাসগুপ্ত ও পীযুস বন্দোপধ্যায়ের সহযোগী।

এছাড়া শাড়ি নামক একটি এনিজিওর (বেসরকারি সংস্থা) পরিচালকও প্রিয়া সাহা। তার এলাকার দলিত সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে এই এনজিওর নামে বিদেশ থেকে টাকা আনেন। তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন সেটাও বিদেশ থেকে টাকা আনার ফন্দি।

কিছুদিন আগে বাগেরহাটের চিতলমারি ও চরবানিরী সীমান্ত এলাকায় ধান কাটা নিয়ে দুই এলাকার মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে উভয় এলাকার লোকের ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় প্রিয়া সাহা নিজের সুবিধামতো সেই ছবি বাড়িতে আগুন দেয়ার কথা বলে ব্যবহার করেছেন যে, নিজের বাড়ি জ্বালিযে দেয়া হয়েছে।

অপর এক সূত্র জানায়, গেল সপ্তাহে প্রিয়া সাহা রাতের একটি ফ্লাইটে আমেরিকায় রওনা হন। তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আকবর কবিরের কন্যা, তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির। কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খুশী কবীর তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন তা খতিয়ে দেখা দরকার।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিনিয়র সিটিজেন বলেন, এ সপ্তাহে তিন চারটি ঘটনা যোগসূত্র টানুন, তাহলেই বোঝা যাবে এসব বড় কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ। যেমন- ভট্ট বাবুর বক্তব্য, পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে, চট্টগ্রামে ইসকনের প্রসাদ বিতরণ ও প্রিয়া সাহার বক্তব্য। এগুলোর সঙ্গে কোনো যোগসূত্র থাকলেও থাকতে পারে। তিনি বলেন, প্রিয়া ট্রাম্পের কাছে যে বক্তব্য দিয়েছে তার স্বপক্ষে প্রমাণ চাওয়া হোক।

ক্ষোভ জানিয়ে আরেক নাগরিক বলেন, প্রিয়া সাহার এই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গী হওয়ায় তার স্বামী মলয় সাহাকে অতিদ্রুত চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। ভুলে গেলে চলবে না তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে এরইমধ্যে অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন দেশের।