• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

টাঙ্গাইলে বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে সেনাবাহিনী

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০১৯  

টাঙ্গাইলে বন্যার পানিতে ভে‌ঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। জেলার ভূঞাপুর-তারাকান্দি বাঁধ মেরামতের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। 

বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের ১৮ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের সেনা সদস্যরা বাঁধটি মেরামতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।

শুক্রবার সকাল থেকে সেনাবা‌হিনী পাউ‌বো ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় জিও ব্যাগে বালু ভর্তির কাজ করেছে। পাঁচ হাজারের অধিক জিও ব্যাগে বালু ভর্তির কাজ সম্পন্ন হলেই একত্রে ডাম্পিং কাজ শুরু করা হবে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এর আগে বৃহস্প‌তিবার বিকেল ৬টার দিকে ওই অংশে লিকেজ দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, প্রশাসন ও স্থানীয়রা বালুর ব্যাগ ফেলে তা বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে রাত ৭টা ৩৫ মি‌নি‌টে দিকে এ সড়ক ভে‌ঙে গি‌য়ে প্লা‌বিত হ‌য়ে‌ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সকল প্রকার সড়ক যোগাযোগ। অল্প সময়ের মধ্যেই বন্যা কবলিত হয় পার্শ্ববর্তী গোপালপুর ও ঘাটাইল উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন।

এছাড়াও ওই সড়কের অন্ততপক্ষে দশটি স্থানে বন্যার পানি লিকেজ করায় ওই অংশও ঝুঁকির মাঝে রয়েছে।

এর আগে বুধবার রাতে তাড়াই এলাকার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় দশটি গ্রাম। এর ফলে বৃহস্পতিবার সকালের দি‌কে বন্যার পানি প্রবেশ করে পৌরসভার টেপিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। পরে দুপুর একটার দিকে বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে থাকা কিন্টারগার্ডেনের দুটি টিনের ঘর ভেসে গিয়ে স্কুল মাঠ গভীর খাদে পরিণত হয়। ঝুঁকির মুখে পড়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি তিনতলা ও একতলা বিশিষ্ট ভবন, এছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি পাকা ভবন।

বাঁধটি রক্ষার জন্য সেনা মোতায়েনের দাবি করেছিলেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, সড়কটি ভাঙার আগে সেনা মোতায়েন করা হলে হয়তো এতো বড় সমস্যা হতো না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউ‌বো, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের গা‌ফিল‌তির কার‌ণে তাড়াই বাঁধটি বন্যার পা‌নি‌তে ভে‌ঙে গে‌ছে। স্থানীয়রা অনেক চেষ্টা করেও তা রক্ষা করতে পারেনি। সং‌শ্লিষ্টরা য‌দি আগেই তাড়াই এলাকার বাঁধটি রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতো তাহলে এদিকে কোন বন্যার পানি ঢুকতো না। সেক্ষেত্রে এ সড়ক ভাঙার কোন আশঙ্কা ছিল না। তারা শেষ সময়ে চেষ্টা করেছে। যা কোন কাজে লাগেনি।

টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশরী সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই সড়ক‌টি হুমকির মুখে ছিলো। এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে লিকেজ দেখা দিলে তা দ্রুত বন্ধ করতে সক্ষম হই। এ অংশে হঠাৎ করেই পানির চাপ বেড়ে লিকেজ দেখা দেয়। প্রবল পানির চাপের কারণে আপ্রাণ চেষ্টা করেও তা রক্ষা করা যায়নি।

অন্যদি‌কে সরাদিনে যমুনা নদীর পানি ২ সে.মি কমে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৭টি উপজেলার ১৫০টি গ্রামের কয়েক শতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্ধ রয়েছে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানিতে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম। বন্যাকবলিত মানুষজন, খাদ্য ও বাসস্থান সংকটে পড়েছে। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।

বন্যার্তদের মাঝে ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ তিনলাখ টাকা বিতরণের কথা জানালেও অধিকাংশ বানভাসি মানুষ ত্রাণ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে শুক্রবার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। এসময় তিনি জানান, এটি যমুনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ হলেও তারাকান্দির যমুনা সার কারখানার সার পরিবহণের জন্য এই সড়কের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন অংশে জিও ব্যাগ ফেলে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যমুনার পশ্চিমাংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে, পূর্বাংশে প্রাথমিকভাবে কাজ চলছে। বকশিগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত ভাঙন রোধে সার্ভে করে স্থায়ী ভাবে বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আগামী বছর থেকেই তার কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন তিনি।

এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন ঘাটাইল শহীদ সালাউদ্দীন সেনানিবাস এর জেসিও মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। পাউবোর চিপ ইঞ্জিনিয়ার অখিল কুমার বিশ্বাস, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের আহ্বানে সেনাবাহিনী বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেছে।

এছাড়াও তিনি বলেন, বন্যার্তদের পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। যারা বন্যার পানিতে আটকা পড়েছেন তাদের কাছে গিয়ে হাতে হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। মেডিক্যাল টিম স্বাস্থ্যজনিত সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় সাংসদ ছোট মনির, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোশারফ হোসেন খান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।

জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানায়, যমুনার নদীর পানি ২ সেন্টিমিটার কমে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এতে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী, নাগরপুর, দেলদুয়ার ও ঘাটাইল উপজেলার প্রায় ১৫০টি গ্রামের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।