• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

বঙ্গবন্ধুকে হারানোর শোকের মাস আগস্ট শুরু

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১ আগস্ট ২০১৯  

আগস্ট মাস শুরু হয়েছে আজ। আগস্ট মানে বাঙালির কাছে শোকের মাস। আগস্ট মানে বাঙালির অপূরণীয় ক্ষতির মাস। এই মাসেই বাঙালি হারিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই সঙ্গে হারাতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রায় সবাইকে। ঘাতকের বুলেট ১৯৭৫ সালের আগস্টে একে একে কেড়ে নিয়েছে কতগুলো প্রাণ। ছোট রাসেলও নিস্তার পায়নি সেই হায়েনাদের হাত থেকে।

বঙ্গবন্ধুকে হারালেও তার আদর্শ আজও বেঁচে আছেন কোটি বাঙালির প্রাণে। সেই আদর্শের পথে দেশের উন্নয়ন এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুকে হারােনার শোক থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আগস্টকে শোকের মাস হিসেবে বরাবর পালন করে আসছে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধুর শোকের দিন। সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে বাঙালি জাতি।

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট শেষ রাতে (১৫ আগস্ট) ঘাতকরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় নৃশংসভাবে হত্যা করে। তাকে সপরিবারে নিঃশেষ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, সদ্য বিবাহিত পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে সেখানে হত্যা করা হয়। বেইলি রোডে সরকারি বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর  ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টুকে। আরেক বাসায় হত্যা করা হয় তার ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিকে। তারা ধানমন্ডি এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস এর বাবা-মা।

বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে শুনে সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা দেন বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ। তবে ৩২ নম্বরের সামনে পথভ্রষ্ট সেনা কর্মকর্তারা তাকে প্রথমে বাধা দেয় ও পরে হত্যা করে। এছাড়া ওইদিন ৩২ নম্বরের বাড়িতে কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্বের বুকে নিন্দিত ও ঘৃণিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ হয়ে আছে। 

সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর বড় সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ও ছোট বোন শেখ রেহানা শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান।

আগস্টে শোক পালনের অংশ হিসেবে পুরো মাসজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ। শোকাবহ আগস্টে সমগ্র জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর আর বেদনাবিধূর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করবে। একেক দিন একেক সংগঠন আয়োজন করবে শোকসভার। এসব সভায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন।

রাত ১২টার পর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছাসেবক লীগ মশাল প্রজ্বলনের মাধ্যমে শোকের কর্মসূচি শুরু করেছে। আগামীকাল একইস্থানে বিকাল তিনটায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করবে কৃষক লীগ। এছাড়া পুরো মাস মিলাদ মাহফিল, কোরান তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিন ১৫ আগস্টে কাঙালি ভোজ ও পরদিন আওয়ামী লীগের শোকসভার মাধ্যমে শোক পালিত হবে। ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগের শোকসভার মাধ্যমে এ বছরের মতো শোকের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটবে।