• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জালনোট কারবারিদের ঠেকাতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০১৯  

ঈদ এলেই মৌসুমী অপরাধীদের ঢল নেমে যায় রাজধানীসহ সারাদেশে। তবে রাজধানীতে নানা কৌশলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। বিশেষ করে জাল টাকা কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠে।

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জাল টাকা তৈরির চক্র ও কারবারিরা। এই চক্র বিপুল পরিমাণ জাল টাকা, ভারতীয় রুপি তৈরি করে গরুর হাট ও সীমান্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তবে এদের রুখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরইমধ্যে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত শতাধিক প্রতারককে গ্রেফতার  করা হয়েছে।

এদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের হাতে। তাদের দেয়া তথ্যে প্রতারক চক্রের সদস্যদের দমন করতে সহজ হচ্ছে বলে জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এই চক্রের প্রধান টার্গেট পশুর হাট। জাল টাকা গরু ব্যাপারী, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই প্রধান টার্গেট। এমন প্রতারণাকে প্রতিহত করতে রাজধানীর সব হাট ও শপিং মলে রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‍্যাব ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও  গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পোশাকধারী, সাদা পোষাকে, সিভিল টিমে ডিউটি করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। 

এদিকে, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, জাল নোট তৈরিতে জড়িত রয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক চক্র। নতুন পুরাতন মিলিয়ে জালনোট চক্রের সঙ্গে সারাদেশে ৫০টি চক্র জড়িত রয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকাতেই ২০ থেকে ২৫টি চক্র রয়েছে। এদের অনেকেই বিভিন্ন সময় আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

জাল চক্র যেন বাজারে প্রতারণা না করতে পারে সেই লক্ষে আগে থেকেই অভিযান পরিচালনা করছে র‍্যাব ও ডিবি পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে আলমগীর হোসেন ও সুমন চন্দ্র সাহা নামের দু’জনকে আটক করে র‍্যাব-২। তাদের কাছে পৌনে তিন লাখ টাকার জাল নোট, একটি বিদেশি পিস্তল ও তাজাগুলি পাওয়া যায়।

র‍্যাব-২ এর এএসপি মোহাম্মদ সাইফুল মালিক জানান, আটক আলমগীর ও সুমন চন্দ্র দীর্ঘদিন যাবৎ তারা পরস্পর যোগসাজশে জাল টাকার ব্যবসা করে আসছে। ঈদকে কেন্দ্র করে তারা কোরবানির পশুর হাটে জাল নোট ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তিনি আরো জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে জড়িত অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।

এরআগে, রাজধানীতে পৃথক অভিযানে জাল টাকা ও ভারতীয় জাল রুপি তৈরি চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৯০ লাখ টাকার জাল নোট ও ২৬ লাখ জাল রুপি। আটক প্রতারকরা হলেন, রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে লাল মিয়া ও শহিদুল ইসলাম, সবুজবাগ থেকে আবিদা সুলতানা ও আলামিন, লিয়াকত হোসেন ওরফে জাকির, শান্তা আক্তার ও মমতাজ বেগম।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করার ক্ষেত্রে রাজধানীতেই অন্তত ২০ থেকে ২৫টি চক্র সক্রিয়। এর আগে গত ৮ জুন রাজধানীর মিরপুরের একটি ভাড়া বাসা থেকে ছাপা ও অর্ধছাপা বাংলাদেশি ১০০০ ও ৫০০ টাকা মূল্যমানের বিপুল পরিমাণ জাল নোট, জাল নোট তৈরির কাগজ, ১২টি ফ্রেম, রং, নিরাপত্তায় ব্যবহৃত থ্রেট সুতা, তিনটি ল্যাপটপ, একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার, তিনটি প্রিন্টার, ১২ বান্ডেল উদ্ধার করা হয়। এ সময় চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রাজধানীতে এই প্রতারক চক্রটি জাল নোট ছড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানায় গোয়েন্দা সংস্থা।

এ বিষয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা তৈরির চক্র সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তাদের অপতৎপরতা রোধে আমাদের গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছেন। কোনোভাবেই যেন তারা প্রতারণা করতে না পারে সেই দিকে প্রস্তুত গোয়ান্দা সংস্থা।

জাল টাকা প্রতারকদের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে ডিবির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা ঈদে পোশাক ও গরু আমদানি করা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জাল রুপি পাচার করে। চক্রটির মূল হোতা লিয়াকত হোসেন জাল রুপি দেশের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আগ্রহী ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করত। শান্তা ও মমতাজ জাল রুপি তৈরির দক্ষ কারিগর বলে ও জানান।

ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছরই ঈদকে ঘিরে মৌসুমী অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে অন্য বছরের তুলনায় খুবই কম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। 

তারা আরো বলেন, অপরাধ করার আগেই অপরাধীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। ঈদকে ঘিরে প্রতি বছর জাল টাকার ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে। তবে এবার বেশ কয়েকটি গ্রুপকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

জাল টাকা প্রতারক চক্র সম্পর্কে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ডিসি মশিউর রহমান বলেন, আমরা সর্বদা জাল টাকা প্রতারক চক্র ও কারবারিদের ধরতে তৎপর রয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন এরইমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি চক্রকে ধরেছি। তারা যতই চতুর হোক না কেন আমাদের হাত থেকে রেহাই পাবে না। আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে।