• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

খালেদা জিয়া দায় এড়াতে পারেন না: প্রধানমন্ত্রী

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় আসামী করা হয়নি এটা ঠিক, কিন্তু তার প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় এ হামলা করা হয়েছিলো। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ দায় তিনি এড়াতে পারেন না।

বুধবার (২১ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে ২১ আগস্টের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্টের আগে খালেদা জিয়া বক্তব্য ছিল- ‘আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা জীবনেও বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না।’ কিন্তু আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর বলে একটা কথা আছে। মানুষ বোঝে না আল্লাহর শক্তি কত? যে অভিশাপ খালেদা জিয়া আমার জন্য দিয়েছিল এখন তা তার কপালেই জুটে গেছে।এটা হলো বাস্তবতা।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গ্রেনেড হামলার বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, আওয়ামী নেতা কর্মীদের নিয়ে আমরা শান্তির মিছিল করতে চেয়েছিলাম।ওই সময় বিএনপি ও জামায়াত সরকার ক্ষমতায়-তাদের মদদ ছাড়া এটা হতে পারে না।

২১ আগস্টের দুঃসহ ঘটনার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ঘটনার পর তাদের ধারণা ছিল, আমি মারা গেছি। গ্রেনেড হামলার পর নিচে নেমে আমি যখন গাড়িতে উঠতে যাবো তখন আবার গুলি করা হলো। আশা করি এর বিচার হবে।

আগস্ট মাস এলেই যেন অশনি সংকেত বয়ে নিয়ে আসে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে ঢাল হিসেবে রক্ষা করেছে। বিএনপি জামায়াতের পৃষ্টপোষকতা ছাড়া ২১ আগস্টের মত ঘটনা ঘটনা সম্ভব না-এটা আজকে প্রমাণিত সত্য। এটা নিয়ে আমরা একটা রায়ও পেয়েছি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তদন্ত করা হয়েছে। যারা আসামি তারা শাস্তি পেয়েছে। ২১ আগস্টের ঘটনায় খালেদা জিয়ার সহযোগিতা থাকলেও তাকে আসামি করা হয়নি। সে তো প্রধানমন্ত্রী ছিল-তার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব ছিল। এটা অস্বীকার করা যায় না। কারণ খালেদা জিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিল। আর বাবর কিন্তু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিল। সে ক্ষেত্রের তার দায়িত্ব তো অস্বীকার কেউ করতে পারে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনার পরে খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে সব নেতা কর্মীদের একই সুর যে আওয়ামী লীগ নিজেরাই গ্রেনেড মেরেছে। আমরা নিজেরা মেরেছি বলতে আমরা নিজেরাই আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। কবে গ্রেনেড মারায় এক্সপার্ট হলাম?- সেটা তো জানি না। এতগুলো গ্রেনেড হাতে করে নিয়ে যাওয়া তো সহজ কথা নয়। সেখানে অনেক টেলিভিশন ছিল রেকর্ড করার সরঞ্জামাদি ছিল।

হামলা সরকারি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সে সময় হাইকোর্টের বিচারপতি জয়নাল আবেদিনকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে। তারা ফরমায়েশি রিপোর্ট দেয়। সাধারণ মানুষ ধরে এনে জজ মিয়াকে আসামি করে আক্রমণ ও ষড়যন্ত্রের হোতা হিসেবে হাজির করে নাটক সাজানো হয়। এখন আস্তে আস্তে সবই বের হচ্ছে। সাধারণ গ্রামের মানুষ সে এত গ্রেনেড কোথা থেকে কিনবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা অনেক কিছু বের করে এনেছেন। এটিও বের করতে পারেন, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ধানমন্ডির ৫ নম্বরে তার শ্বশুরবাড়িতে আগের ১০ মাস থাকতো। ঠিক ১ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টের বাসায় কেন চলে যায়, এ সময় ওখানে বসে বসে তার কাজ কী ছিল?

জিয়াউর রহমান খন্দকার মোশতাকের সহযোগী ছিলো দবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনে কখনো কোন ভয়ে ভীত হইনি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা বাস্তবায়ন করাই আমার সব সময়ের লক্ষ্য থেকেছে। আপনার একবার চিন্তা করে দেখেন, আমার বাবা মা ভাই বোনদের হত্যা করা হয়েছে; তাদের কোন বিচার হয়নি, ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। এটা ঠিক আমার বাবার ক্যাবিনেট মিনিস্টার থেকে অনেকেই এটার সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের সহযোগী ছিল ওই জিয়াউর রহমান। যে তাদের একান্ত সহযোগী এটাতে সন্দেহ থাকার কোন কথা নেই। কারণ যাকে সব থেকে বিশ্বস্ত মনে করে তাকেই সেনাপ্রধান করা হয়। খন্দকার মোশতাক যখন নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে তখন জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছিল। জিয়াউর রহমান যদি এই ষড়যন্ত্রের সাথে লিপ্ত না থাকতো তাহলে মোস্তাক কখনোই তাকে সেনাপ্রধান করত না।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন; আহত হন কয়েকশ’ নেতাকর্মী। সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। পরে ওই ঘটনায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র ও সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি এবং বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ নাটকীয়তার পর ওই দুই মামলার ওপর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া রায়ে তিন সাবেক আইজিপিসহ ১১ সরকারি কর্মকর্তার বিভিন্ন মেয়াদে লঘুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

রায় ঘোষণার পর ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর এ মামলায় আসামিদের জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্স সংবলিত প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথি অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। পরে গত ১৩ জানুয়ারি এ মামলা শুনানির জন্য গ্রহণ করে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।