• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

উদ্ধারের টাকা যাবে কোথায়?

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ঘোষণা দেয়ার পর মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরইমধ্যে অভিযান চালানো হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে। জুয়া, মাদক ও অবৈধ অর্থের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানে নানা ধরনের অবৈধ জিনিসপত্রের পাশাপাশি অর্থও উদ্ধার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতিবিদের বাসায় অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে অন্তত ৩৫ ব্যক্তির দেশছাড়ার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।

উদ্ধার করা টাকার পরিমাণ প্রায় দুইশ' কোটি টাকার ওপরে। তবে উদ্ধার করা টাকা কোথায় যাবে এ নিয়ে আলোচনা চলছে সবজায়গায়।

জানা গেছে, গত শুক্রবার প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করে র‌্যাব। সে সময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক দ্রব্য ছাড়াও এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) এর নথি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর জি কে শামীম ও অপর যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নিজস্ব এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলমের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও স্থাগিত করা হয়েছে।

এছাড়া গত মঙ্গলবার রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করেছে র‌্যাব। তারা ক্যাসিনোর লাভের টাকা বাসায় নিয়ে রাখতেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

সূত্রাপুরে তাদের বাড়িতে থাকা তিনটি ভল্ট থেকে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও আট কেজি (৭৩০ ভরি) স্বর্ণ পাওয়া যায়। এর পরে এনামুল হকের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি ভল্ট থেকে এক হাজার টাকার অনেকগুলো বান্ডিল পাওয়া যায়। তাতে প্রায় দুই কোটি টাকা রয়েছে বলে জানায় র‌্যাব। পরে রাজধানীর নারিন্দায় এনামুল হকের এক বন্ধুর বাসা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী (সম্রাট) ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। গত মঙ্গলবার সিআইসি থেকে সরাসরি ব্যাংকগুলোতে চিঠি দিয়ে আলোচিত এ দুই নেতা এবং তাদের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এসব ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, মানি লন্ডারিংসহ নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অ্যাকাউন্টগুলোতে অর্থ জমা ও লেনদেনের হিসাব নেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি এসব অপরাধে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের হিসাবও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধান চলাকালে তাদের হিসাবে টাকা জমা হবে কিন্তু উত্তোলন করা যাবে না বলে উল্লেখ করেন বিএফআইইউ প্রধান।

বিপুল অঙ্কের টাকা পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির গবেষণা কর্মকর্তা খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজেট প্রণয়নের সময় একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার। সে সময় তিনি আরো বলেন, দেরিতে হলেও ভালো যে, সম্প্রতি অবৈধ উপার্জন বা অর্থের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এসব অভিযানে যেসব অপ্রদর্শিত অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর মালিক বৈধ উৎস দেখাতে না পারলে তা সরকারের কোষাগারেই জমা হবে। তবে অভিযান সঠিকভাবে পরিচালিত হলে টাকার অঙ্ক ভাবনার বাইরে হতে পারে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন এই গবেষক।

এদিকে এইসব অবৈধ অর্থের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ অর্থ অর্জনকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে হবে। তাদের আগে নোটিশ দিতে হবে। এই টাকা কোথায় পেয়েছে সেটা জিজ্ঞাসা করতে হবে। সঠিক জবাব দিতে না পারলে অন্য ব্যবস্থা। আর দিতে পারলে তাদের আয়ের সঙ্গে যোগ করে আয়কর আদায় করা হবে।

অন্যদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, গত কয়েকদিনে পুলিশ র‍্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম এসেছে, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের আয়ের উৎস দেখার জন্য এই তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আরো বলেন, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের কাছে যে অর্থ পাওয়া গেছে, তাদের ট্যাক্স ফাইল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর এই করের বিষয় যাচাই করার জন্য সন্দেহভাজনদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করা হয়েছে যাতে তারা টাকা সরিয়ে নিতে না পারে।