• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

দিনাজপুরে সাঁকোর টাকা মেরে দিলেন চেয়ারম্যান!

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

দিনাজপুর বীরগঞ্জের উপজেলার শতগ্রাম ইউপির বলদিয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সড়কে খালের ওপর প্রায় ২০০ মিটার কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসী।

অভিযোগ উঠেছে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছেন শতগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান ডা. কে এম কুতুব উদ্দিন।

উপজেলার শতগ্রাম ইউপিতে ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় ঝাড়বাড়ি থেকে গড়ফতু যাওয়ার সড়কে খালের ওপরের একমাত্র ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ে যায় গ্রামবাসী। সে সময় এলাকাবাসী বিভিন্ন জনের কাছে চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে ব্রিজের পাশেই একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে। তবে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল প্রকল্প থেকে শতগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের সেই সড়কে খালের ওপর কাঠের সাঁকো নির্মাণের জন্য ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে ওই টাকা তুলে নেন ইউপি চেয়ারম্যান।

ক্ষোভ প্রকাশ করে শতগ্রাম ইউপির বাসিন্দা শুকুর আলী বলেন, মসজিদে ঘোষণা দিল চেয়ারম্যান টাকা তুলছে এই টাকা দেয় না কেন। আমরা বিভিন্নভাবে চাঁদা তুলে নির্মাণ করেছি। পরে আমরা জানতে পারলাম সাঁকোর জন্য বরাদ্দ আসছে, আর এই টাকা চেয়ারম্যান উঠিয়েছে।

তিনি আরো বলেন কিছু টাকা ঋণ পরিশোধ করলেও বেশিরভাগ টাকা চেয়ারম্যানের কাছেই আছে।’আমরা টাকাগুলো মসজিদেও দিতে বলেছিলাম। কিন্তু চেয়ারম্যান দেয়নি। উপজেলার শতগ্রাম ইউপির বলদিয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সড়কে খালের ওপর কাঠের সাঁকো নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৬ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়েছিল। ওই কমিটি দ্বারা কাঠের সাঁকো নির্মাণের কথা থাকলেও সেই কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনেকে টাকা উঠানোর বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে ছয়জন ইউপি সদস্যকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও রেজুলেশন বইতে স্বাক্ষরের পর সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটির গঠন করেন চেয়ারম্যান। প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প কমিটির সভাপতি শতগ্রাম ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল হোসেন বলেন, আমি প্রথমে কাঠের সাঁকো প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলাম। পরে খাতায় রেজুলেশন করার কিছুদিন পর আমাদের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়।

কমিটি ভেঙে দেয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন, আপনারা যদি সাঁকো নির্মাণের টাকা উঠিয়ে খেয়ে ফেলেন এ জন্য আপনাদের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে।

ইউপি সদস্য আরো বলেন, আমরা জানিই না কবে টাকা এসেছে, কবে উঠানো হয়েছে। আমরা টাকা উঠিয়ে মেরে খাব বলে আমাদের কমিটি ভেঙে দিয়েছিল চেয়ারম্যান।

শতগ্রাম ইউনিয়নের গড়ফুতু এলাকার বাসিন্দা আব্দুল সালাম বলেন, গ্রামবাসীর কাছে চাঁদা তুলে ও আমাদের এলাকার সমিতি গাছ কেটে সে সময় আমরা কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করি। সাঁকোটি নির্মাণের পর শুনছিলাম যে সরকারি ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ আসছে, যা আমাদের চেয়ারম্যান তুলে নেন। ব্রিজ নির্মাণ শেষে আমাদের ৩৯ হাজার টাকা ঋণ ছিল। সেই ৩৯ হাজার টাকা ব্রিজ নির্মাণের ৫ থেকে ৬ মাস পর চেয়ারম্যান আমাদের দিয়েছিলেন’ এবং ‘বাকি টাকা চেয়ারম্যানের কাছেই দুই বছর ধরে আছে'।

তবে টাকা মেরে খাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে শতগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কে এম কুতুব উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে অর্ধেক ব্রিজ নির্মাণ করেছিল। বাকি অর্ধেক ব্রিজ বরাদ্দের টাকায় করা হয়। ব্রিজ নির্মাণের কতদিন পর বরাদ্দ দেয়া হয় জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ব্রিজ নির্মাণের বেশ কয়েক মাস পরে বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাকিতে মালামাল ও শ্রমিক নেয়া হয়। বরাদ্দ আসার পর সেই বাকি টাকা পরিশোধ করা হয়।

এ বিষয়ে বীরগঞ্জের ইউএনও মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। সাঁকো নির্মাণের টাকা কেউ মেরে খেয়েছে প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।