• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

নিজ সন্তানদের আইনের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন বাড়ছে

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০১৯  

দিনাজপুরের বিরামপুর, হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট ও ফুলবাড়ী উপজেলায় মাদকাসক্ত তরুণ ও যুবকের সংখ্যা বাড়ছে। বাধ্য হয়ে অনেক অভিভাবক সন্তানদের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তাদের তুলে দিচ্ছেন। অনেকে মান সম্মানের কথা ভেবে নিরবে সন্তানের অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করছেন।

ওই পাঁচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিরামপুর এবং ফুলবাড়ীতে প্রতি সপ্তাহে গড়ে দুইজন এবং নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাটে সপ্তাহে একজন করে অভিভাবক মাদকাসক্ত সন্তানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আইনের আওতায় নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, তার বড় ছেলে গত ঈদে নতুন পোশাক কেনার জন্য অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ছেলে বাড়িতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। বাধ্য হয়ে তিনি চাহিদা অনুযায়ী টাকা দেন। কিন্তু ছেলে নতুন কাপড় না কিনে, পুরনো কাপড় পরে ঈদগাহে যায়। নতুন কাপড়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই, ছেলে আবার বাড়িতে অশান্তি তৈরি করে। তখন বুঝতে বাকি থাকে না, ছেলে টাকা-পয়সা কি করেছে। বাধ্য হয়ে তাকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি।

থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাদকের মামলায় হাকিমপুরে ৪৯৮ জন, বিরামপুরে ৩৫৯ জন, নবাবগঞ্জে ২৪৫ জন, ঘোড়াঘাটে ১৩৬ জন এবং ফুলবাড়ীতে ১৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফুলবাড়ির ইউএনও আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, মাদকাসক্ত তরুণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম দুটি বড় কারণ, পারিবারিক বন্ধন আলগা হয়ে যাওয়া এবং অভিভাবকদের বড় অংশেরই প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞতা। পারিবারিক বন্ধন আলগা হয়ে যাওয়ার কারণে, বাবা-মা ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা সন্তানদের শাসন করতে পারছেন না। দিন দিন এমন এক ধরনের সমাজ ব্যবস্থা চালু হয়েছে, যেখানে অপরাধীদের বিষয়ে কেউ আর অভিযোগ দিতে চাচ্ছেন না।

বিরামপুরের ইউএনও মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান বলেন, তিনি দুই বছর থেকে বিরামপুরে কর্মরত। তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকেই, গড়ে সপ্তাহে দুইজন অভিভাবক মাদকাসক্ত সন্তানদের হাতে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আসেন। সেইসঙ্গে মাদকাসক্ত সন্তানকে আটক করে কারাগারে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। মা-বাবা কতটা নির্যাতিত হলে সন্তানকে জেলে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন, তা সহজেই অনুমেয়। তবে মাদকাসক্তদের একটা বড় অংশের পরিবার, মান সম্মানের কথা চিন্তা করে সন্তানদের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে রাখছেন। দিনাজপুরের মাদক নিরাময় কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এই জেলায় চারটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো মাসে গড়ে ৮০ থেকে ১০০ জন মাদকাসক্ত রোগী ভর্তি হয়। তাদের বেশিরভাগের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। গত বছরের তুলনায় বর্তমানে রোগী ভর্তি হওয়ার হার ২০ থেকে ৩০ ভাগ বেড়েছে।