• শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৩ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

এটিএম জালিয়াতি রোধে উন্নতমানের এটিএম মেশিন উদ্ভাবন 

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

এটিএম জালিয়াতি রোধে উন্নতমানের এটিএম মেশিন উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) একদল গবেষক। এতে তারা ব্যবহার করেছেন গ্রাহকের দুই আঙুলের ছাপ, চেহারা স্ক্যানিং, চোখের মণি স্ক্যানিং, ওয়ান টাইম (

একবার ব্যবহার উপযোগী) পাসওয়ার্ডের মতো অনেক সুরক্ষা স্তর। এটিএম বুথে গিয়ে কোনো বিপদে পড়লে সেখান থেকে কার্ডের মাধ্যমে অন্যের কাছে সংকেত পাঠানো যাবে। গবেষক দলের দাবি- তাদের উদ্ভাবিত যন্ত্রের মাধ্যমে এটিএম জালিয়াতি শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।

রুয়েটের মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. সজল কুমার দাসের নেতৃত্বে এটিএম মেশিনটি উদ্ভাবনে গবেষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ সিরিজের শিক্ষার্থী রাশেদুজ্জামান, মশিউর রহমান আকাশ ও ১৬ সিরিজের শিক্ষার্থী নাহিদ লাবিব চৌধুরী। বিভাগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দে তারা এই গবেষণা করছেন বলে জানান ড. সজল কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা আরএফ আইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) কার্ড দিয়ে কাজ করেছি। এতে শতভাগ সফল হয়েছি। দ্রুতই ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড সংযোগ করার বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে। এর বাইরে নতুন আরও কিছু বিষয় যোগ করব।’

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যেসব এটিএম প্রচলিত, তাতে এতগুলো সুরক্ষা স্তর নেই। ফলে সহজেই প্রতারণার মাধ্যমে এটিএম থেকে টাকা তুলে নেয় জালিয়াত চক্র। তাদের উদ্ভাবিত মেশিন থেকে কেউ চাইলেই জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন করতে পারবে না। এখানে ৪-৫ ধরনের নিরাপত্তা স্তর ভেরিফিকেশন হলেই টাকা বের হবে।

সুরক্ষার বিষয়ে ড. সজল বলেন, অ্যাকাউন্টে থাকা টাকার সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতেই তাদের এই গবেষণা। তাদের এই প্রযুক্তি হ্যাক করে কারও তথ্য নেওয়া সম্ভব নয়। মেশিনে কার্ড প্রবেশ করানোর পর টাকা তুলতে হলে তাকে আঙুলের ছাপ দিতে হবে। এরপর মেশিনের সামনে থাকা ক্যামেরায় তার চেহারা স্ক্যান করবে। সবগুলো ভ্যারিফিকেশন সঠিক হলে তখন টাকা বের হবে। তাছাড়া এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে না। পরবর্তী সময়ে অ্যাকাউন্টে থাকা টাকার আরও সুরক্ষা দিতে আইরিশ (চোখের মণি) স্ক্যানিং প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, টাকার সঙ্গে ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য তারা কাজ করছেন। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এটিএম গ্রাহকদের নিবন্ধন থাকবে। বায়োমেট্রিকের সময় দুই আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। এর একটি তার টাকা উত্তোলনের জন্য, আরেকটি টাকা উত্তোলন বন্ধ রাখার জন্য। ধরা যাক এটিএম বুথে গ্রাহককে ছিনতাইকারীরা টাকা তুলে দিতে বল প্রয়োগ করছে। তখন তিনি টাকা উত্তোলন বন্ধ রাখার আঙুলের ছাপ দেবেন যা ছিনতাইকারী বুঝতে পারবে না। এতে করে মেশিন থেকে টাকা বের হবে না। আঙুলের ছাপ দেওয়ায় বুথে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। এতে লোকজন ভেতরের সমস্যা সহজেই বুঝতে পারবে। তা ছাড়া গ্রাহক তার বিশ্বস্ত কারও ফোন নম্বর বা ইমেইল ব্যবহার করতে পারবেন।

ফলে তিনি কখনও টাকা তুলতে গিয়ে আঙুলের ছাপ (যেটি টাকা উত্তোলন বন্ধ করবে) দিলে ওই মোবাইল নম্বর বা ইমেইলে এটিএম বুথের নাম-ঠিকানাসহ তার কাছে বিপদ সংকেত মেসেজ পৌঁছে যাবে। এতে গ্রাহক টাকা ও তার নিজের বাড়তি নিরাপত্তা পাবেন।

মেশিনে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. সজল বলেন, অ্যাকাউন্টের মালিক প্রতিবার টাকা তোলার পর অথবা যে কোনো সময় একটি পাসওয়ার্ড এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্বাচন করতে পারবেন। ফলে গ্রাহকের কার্ড ও পাসওয়ার্ড দিয়ে তার পরিবর্তে অন্য কেউ টাকা তুলতে পারবেন।

তবে ওই পাসওয়ার্ড দিয়ে একবার টাকা তোলার পর সেটি অটোমেটিক নষ্ট হয়ে যাবে। আর ওই পাসওয়ার্ড নির্বাচনের সময় যত টাকা নির্বাচন করেছিলেন তার চেয়ে বেশি টাকা তুলতেও পারবেন না। এতে করে কার্ডের মালিক যে কাউকে বিশ্বাস করে পাসওয়ার্ড দিতে পারবেন এবং টাকা তুলে আনতে পারবেন। খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষক দলের সদস্য রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘মেশিনটি তৈরিতে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমবার মেশিন তৈরির জন্য অনেক যন্ত্রাংশ নষ্টও হয়েছে। তবে এখন এটি তৈরিতে দুই লাখ টাকা লাগতে পারে।’ এছাড়া বাজারে থাকা এটিএম মেশিনের চেয়ে অনেকটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে বলেও জানান তারা। খুব দ্রুত মেশিনটি বাজারজাত করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে গবেষক দল।