• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন কেন্দ্র হতে যাচ্ছে পীরগঞ্জের নীল দরিয়া!

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০১৯  

রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের নীল দরিয়া। একসময় যা ছিল, নীলাম্বর রাজার রাজধানী, তা এখন পর্যটন কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক নীলদরিয়া পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকার বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ১২শ শতাব্দির মাঝা-মাঝি উত্তর জনপদে এক সময় প্রবল পরাক্রান্ত রাজাগণ ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। তাদের কোন একজনের বংশের শেষ রাজা নীলাম্বর দেব। নীলাম্বর দেবের অনেকগুলো প্রধান কেন্দ্র এবং রাজধানী ছিল। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে, চতরা নীল দরিয়া নামে পরিচিত এলাকাটি। বর্তমানে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার, পীরগঞ্জ আসনের এমপি ড. শিরীন শামিন চৌধুরী গত ৩০ জুলাই আনুষ্ঠানিক ভাবে নীল দরিয়া পর্যটন কেন্দ্র উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ১২শ শতাব্দীতে বাংলায় যখন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতাপ প্রতিপত্তি ছিল, তখন অখণ্ড পাক ভারতের রাজধানী ছিল গৌড়ে। মহারাজা লক্ষণ সেন ছিলেন গৌড়ের রাজা। তারই অধীনে ছিলেন পীরগঞ্জের রাজা নীলাম্বর দেব। তিনি গৌড়ের রাজা লক্ষণ সেনকে কর দিতেন।

মূলত শত্রুপক্ষের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য রাজা নীলাম্বর, রাজধানীর ৫৬ একর জমির চারপাশে ৮০ হাত প্রস্থ এবং ৮০ হাত গভীর একটি পুকুর খনন করেন। তারই পরিখার মাটি দিয়ে রাজধানীকে সুরক্ষিত করার জন্য চারপাশে উঁচু করে ১৪ হাত প্রস্থের ইটের প্রাচীর নির্মাণ করেন। প্রাচীরের দক্ষিণে রাখা হয় একটি মাত্র সদর দরজা। এই দরজা বন্ধ করা হলে রাজধানীর ভেতরে প্রবেশ করার কোন সুযোগ ছিল না। রাজধানীর সুরক্ষার কাজ শেষ করে নীলাম্বরের সৈন্যরা রাজধানী থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে এসে অসংখ্য গড় তৈরি করেন। সেই গড়ে হাতি পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে পারতো। এখনও সেই ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে গড়গুলো বিদ্যমান।

কথিত আছে, বহু আগে এক প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে এই রাজধানীর চারপাশে খননকৃত পরিখার উত্তর পূর্ব কোন ভরাট হয়ে যায়। অবশিষ্ট এলাকা এখনও গভীর নীল জলাধার। যে কারণে এলাকাবাসী এটির নামকরণ করেছে নীল দরিয়া। জলধারবেষ্টিত মাঝের উঁচু স্থানে কয়েক শ গাছের চারা রোপন করে বনবিভাগ।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার টিএ মমিন জানান, মানুষের মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এটির উন্নয়ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মনের খোরাক মেটানোর জন্য ছুটির দিনে আশে পাশের লোকজন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এই জায়গা উপভোগ করতে পারবে। এক দিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এটি, তারপর এখানে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন হতে যাচ্ছে। আশা করা যায়, এখান থেকে সরকারের প্রতি বছর রাজস্ব আয় তৈরি হবে এবং একই সাথে অনেক বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।