• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

আরেক ধাপ এগোলো শেখ হাসিনা নকশী পল্লী

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এবার জামালপুরে হচ্ছে শেখ হাসিনা নকশী পল্লীসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প। এরইমধ্যে জেলার শহরের ঝিনাই নদীর পাড় ঘেঁষে জেলা সদর ও মেলান্দহে শেখ হাসিনা নকশী পল্লীর ৩০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন হয়েছে। এতে করে আরো এক ধাপ এগোলো প্রকল্পটির কাজ।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা নকশী পল্লীর জন্য ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এরইমধ্যে জামালপুর সদর উপজেলায় ২০৪ দশমিক ৭৩৫০ একর ও মেলান্দহ উপজেলায় ৯৫ দশমিক ২৬৫০ একর জমির অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে।

কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর একনেক সভায় শেখ হাসিনা নকশী পল্লীর জন্য ৭৭২ কোটি টাকা বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর পরিকল্পনা বিভাগ চলতি বছরের ১৪ মে প্রকল্পটির জিও জারি করে। আর ২১মে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। ২৩ জুন প্রকল্পের অনুকূলে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ২৩ জুলাই মন্ত্রণালয় কর্তৃক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। বরাদ্দকৃত অর্থের বিভাজন অনুমোদনের প্রস্তাব ২৪ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদনের প্রস্তাব ৫ আগস্টে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির অনুকূলে ২০০৯-১০ অর্থবছরের এডিপিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ২৯ আগস্ট ১০০ কোটি টাকা দেয়া হয়। ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন এবং প্রথম কিস্তি বাবদ এক কোটি ৫৩ লাখ টাকা অবমুক্তকরণ প্রস্তাব ১২ সেপ্টেম্বরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

কার্যপত্রে উল্লেখ রয়েছে, বৈঠকে শেখ হাসিনা নকশী পল্লী ছাড়াও শেখ হাসিনা বিশেষায়িত জুটমিল, শেখ হাসিনা সোনালী আঁশ ভবন, শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সোনালী ব্যাগ প্রকল্প ও ভিসকস প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্নের সুপারিশ করা হয়।

তাঁত বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্যাবলী সম্বলিত নকশী কাঁথার চাহিদা দেশসহ সারাবিশ্বে রয়েছে। নকশী কাঁথা জামালপুর জেলার ব্র্যান্ড হিসেবে আখ্যায়িত। জেলার বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ ও সদরে নকশী কাঁথা কমবেশি উৎপাদন হয়। এর মধ্যে জামালপুর সদরের শরিফপুর, দিগপাইত, মেষ্টা ও তিতপল্লা ইউপি ও বকশিগঞ্জে কিছু তাঁতী রয়েছেন। জামালপুর-শেরপুরের প্রায় ২৬১টি তাঁত পরিবার বাস করে। ৩৫টি পিট বা চিত্তরঞ্জন ও ২০০টি জামদানি তাঁত বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে শিল্পটির তেমন প্রসার ঘটেনি। এখন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা আর্থিক, বিপণন সমস্যা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ব্যবসা প্রসারে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ছাড়া শেরপুরে ৭৬ নকশী উদ্যোক্তা ও তিন হাজার ৯৮৫ নকশী শিল্পী রয়েছেন।

কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এমপি বলেন, নানা প্রতিকূলতা ও পুনর্বাসনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পী ও শিল্প। তাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব শিল্পীদের একই ছাদের নিচে আনতে শেখ হাসিনা নকশী পল্লীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে উপজাতিদের তাঁত শিল্পী ও শিল্প পাওয়া যাবে। এ জন্য প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করার সুপারিশ করা হয়।

মির্জা আজম আরো বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু জামালপুরের হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের পুনর্বাসন নয়, এখানে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে ভালো প্রভাব রাখবে। জামালপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন। এ প্রকল্প চালু হওয়ার পাঁচ বছরে জামালপুরে কোনো দরিদ্র মানুষ থাকবে না। জামালপুর হবে দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ জেলা। বিদেশিরা বাংলাদেশের পরে জামালপুরকে চিনবে।

বৈঠকে কমিটি সদস্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, রনজিত কুমার রায়, শাহীন আক্তার, আব্দুল মমিন মণ্ডল, খাদিজাতুল আনোয়ার, তামান্না নুসরাত (বুবলী) বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজেএমসির চেয়ারম্যান, বস্ত্র ও পাট অধিদফতর মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।