• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

অবরুদ্ধ কাশ্মীরঃ ১৪৪ ধারা জারি, থমথমে পরিস্থিতি

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৬ আগস্ট ২০১৯  

বিতর্কিত কাশ্মিরকে একতরফাভাবে দুভাগ করার পথে হাঁটছে ভারত সরকার। এরইমধ্যে ভারতের সংবিধানের ৭০ এবং ৩৫-এ ধারা বাতিল, তথা স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার বিষয়ে মোদী সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে প্রবল আপত্তি তুলেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ পাকিস্তান। এমনকি ভারতের এই একগুয়ে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যা যা করা দরকার সব করার ঘোষণা আসছে ইমরান সরকারের পক্ষ থেকে।

কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো যখন সরব হয়ে উঠেছে ঠিক তখনই পালে হাওয়ার যোগান দিচ্ছে পাকিস্তান। ভারত সরকারের চরম বৈষম্যমূলক এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাও করছে পাকিস্তান। বিশ্লেষকদের ধারণা, কাশ্মির ইস্যু পাক-ভারত যুদ্ধকে নতুন করে উস্কে দিতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে লিখেছে- ভারত সরকার সাত দশকের বিতর্কিত এই অঞ্চলটি নিয়ে দুদেশের উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। মোদী সরকারের বিশ্বাস, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মিরে হিন্দুদের জমি কিনে বসবাসের মাত্রা বাড়িয়ে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটির জনসংখ্যার চিত্র পাল্টে দেবে। কাশ্মির ইস্যুতে পাক-ভারতের মধ্যকার আঞ্চলিক উত্তেজনা নতুন যুদ্ধের কারণ হতে পারে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। কাশ্মিরের জনগণের ওপর ভারতের এই সিদ্ধান্তকে ‘মানসিক আঘাত’ বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

এদিকে ভারতের নেয়া এই একতরফা সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও বিরোধিতা করে এক বিবৃতিতে বিষয়টিকে ‘বিপজ্জনক খেলা’ বলে উল্লেখ করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। মুসলিম প্রধান এলাকা কাশ্মিরকে হিন্দু প্রধান করার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করতেও ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার অন্তর্ভুক্ত এই কাশ্মির অঞ্চল নিয়ে ভারতের নতুন সিদ্ধান্ত কাশ্মির ও পাকিস্তানের জনগণ কখনোই মেনে নেবে না বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের আগস্টে পাকিস্তান ও ভারত স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কের সূচনা। কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং স্বাধীনতা অথবা ভারতের সঙ্গে থাকতে চাইলেও পশ্চিম জম্মু ও গিলগিট-বালতিস্তানের মুসলিমরা পাকিস্তানের সঙ্গেই থাকতে চাইছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে হরি সিং কাশ্মির নিয়ে ভারতে যোগদানের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। যার পরিণামে ওই বছরই শুরু হয় পাক-ভারত যুদ্ধ। প্রায় দু’বছর ধরে চলেছিল এই যুদ্ধ।

১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের সময় চীন কাশ্মীরের আকসাই-চিন অংশটির দখল নেয়। পরের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে সপে দেয়। এর পরই থেকেই বিতর্কিত কাশ্মীর ভাগ হয়ে যায় ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে।

কাশ্মির ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিতীয় যুদ্ধটি বাঁধে ১৯৬৫ সালে। একপর্যায়ে দেশ দুটির মধ্যে আবারও যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ১৯৭১ সালে তৃতীয় পাক-ভারত যুদ্ধ ও ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তির মধ্য দিয়ে 'লাইন অব কন্ট্রোল' বা নিয়ন্ত্রণ রেখা চিহ্নিত করা হয় কাশ্মিরে। যা এখনও বলবৎ ও চলমান।