• শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ২ ১৪৩১

  • || ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

নদীর পেটে কোটি কোটি টাকা, তবুও মেলেনি সুফল

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২৪  

নীলফামারীতে পানির স্তর ধরে রাখতে বেশ কয়েকটি নদ-নদী খনন করা হলেও বন্যায় আবারো ভরাট হয়ে গেছে। এখন নদীর বুক চিড়ে আবাদ হচ্ছে হরেক প্রজাতির ফসল। নদীতে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে গভীরে। এতে জীবন্ত সত্তা ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি জীব-বৈচিত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। খননের পরে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীর দুই ধারে ফলজ আর বনজ গাছের চারা গাছ লাগানোর কথা থাকলেও চারা রোপণ করা হয়েছে নামে মাত্র।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল প্রবাহে চাষাবাদ হওয়ার ফলে নদীর বৈশিষ্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে নদীগুলো দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত নদী বাঁচাতে বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, খননের পরে নদীগুলোতে পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বাড়ার কারণে বেড়েছে ভাঙন।

জেলার ছোট-বড় প্রায় ২৭টি নদ-নদীর মূলপ্রবাহ বন্ধ করে স্থানীয় কিছু কৃষক করছেন বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ। তবে অধিকাংশ নদীতে চলতি মৌসুমে আবাদ করা হয়েছে বোরো ধান। নদীর মূলপ্রবাহ শুকিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ হচ্ছে বলেও ধারণা অনেকের। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা তো দূরের কথা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি তীরবর্তী বাসিন্দাদের।

বুড়িখোড়া নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, নদী পরিকল্পিতভাবে খনন করা হয়নি। নদীর পলি তুলে দুই ধারে দেওয়া হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে সব পলি আবারো নদীতে পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এখন নদীর মূলপ্রবাহ শুকিয়ে যাওয়ায় পুরো নদীজুড়ে কৃষকরা ধানসহ নানা ধরনের ফসল আবাদ করছেন। এতে জীব-বৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়ছে।

আরেক বাসিন্দা শাহিন হোসেন বলেন, নদীর খননের পর বাঁধগুলো ভালোভাবে না বাঁধার কারণে আবারো নদী ভরাট হয়ে গেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে দুই ধারে বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ লাগানোর কথা থাকলে একটি চারাও রোপণ করা হয়নি। নদী খননের আগে দুই ধারে মানুষের অনেক গাছ ছিল তা কেটে ফেলা হয়েছে। এতে জলবায় পরিবর্তনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দাবি, জীব-বৈচিত্র রক্ষার্থে নদী আবারো খনন করে দুই ধার ভালো করে বাঁধা হোক। আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে দুই ধারে গাছ লাগানো জরুরি।

চারাল কাটা নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগে নদীতে নানা প্রজাতির মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। নদী খননের পর থেকে দেখা গেছে নদী ভরাট হয়ে গেছে। এখন মানুষ গোসলেরও পানি পায় না। মানুষ ধান আবাদ করছে।

রিভারাইন পিপ্লসের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, নদীর মূলপ্রবাহে চাষাবাদের ফলে স্বাভাবিক বৈশিষ্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জীব-বৈচিত্র ধ্বংসের পাশাপাশি নদী হারিয়ে ফেলে পলি অপসারণ ক্ষমতা। পানির স্তর ধরে রাখতে বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা করতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ১৬৮ কিলোমিটার নদী খননের পরেই বেড়েছে ভাঙন। ফলে কিছু কিছু জায়গায় ভরাটও হয়েছে। মানুষ এসব জায়গায় আবাদ করছে। আবাদ বন্ধ করতে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে।