• বুধবার ০৩ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

  • || ২৫ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

পায়ের ঘষায় উঠে যাচ্ছে ৪ কোটি টাকার সড়কের কার্পেটিং

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৪  

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা সেচ ক্যানেলের পরিদর্শন সড়ক চার কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের এক সপ্তাহ পরই পিচ গলে উঠে যাচ্ছে। পথচারীর পায়ে লেগে যাচ্ছে সড়কের পিচ। আবার যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে সড়কে। এমনকি পা দিয়ে ঘষলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমান ও কম পুরুত্ব দিয়ে অপরিকল্পিত কার্পেটিং করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

সড়ক ব্যবহারকারীরা জানান, সড়কের প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জায়গার পিচ গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পিচ উঠে গাড়িসহ নষ্ট হচ্ছে চালকের জামা কাপড়। ফলে সড়কে অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থ।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও মহাসড়কে যে, ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের পিচ ব্যবহার করা হয়। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ৪৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই মানের পিচ গলে যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) উৎপাদিত পিচের গলনাঙ্ক ৫২ থেকে ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পলিমার মডিফাইড বিটুমিনের (পিএমবি) গলনাঙ্ক ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বেশিরভাগ সময় ৫২ থেকে ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকার পরও সড়কের পিচ গলে যায় না। ভেজাল বিটুমিন ব্যবহার করা না হলে মাত্র ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ার কথা নয়।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দে তিস্তা নদীর প্রধান সেচ ক্যানেলের ডালিয়া-দুন্দিবাড়ী পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পায় আবুল কালাম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি সম্পন্ন করেছেন লোকমান হোসেন নামে সাব ঠিকাদার। দরপত্রে শতভাগ এলসির ভাঙা পাথর ও দেশি বিটুমিন দিয়ে পরিদর্শন সড়কটি সংস্কার করার কথা। গত সোমবার (১৫ জুন) কম দামি স্থানীয় লোকাল পাথর ও ইরানি বিটুমিন দিয়ে সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করেন সাব ঠিকাদার লোকমান হোসেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কজুড়ে কালো পিচ গলে উঠে যাচ্ছে। সড়কের কয়েকটি স্থান ধসে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের দুই পার্শ্বের বেশিরভাগ জায়গায় ইটের রেজিং নেই। সড়কে হাঁটার সময় জুতায় বিটুমিন ও কার্পেটিং উঠে আসে।

স্থানীয়রা বলেন, এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। অথচ সড়কটির কার্পেটিং মাত্র ৭ থেকে ৯ মিলিমিটার করা হয়েছে। পরিমাণে বিটুমিনও দেওয়া হয়েছে কম। সড়ক সংস্কারের পর ওই সড়কটি উঁচু নিচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া কার্পেটিংয়ের আগে হাওয়া মেশিন দিয়ে সড়কের ধুলাবালি পরিষ্কার করার কথা। তবে তা না করেই ধুলা-ময়লার ওপরই কার্পেটিং করেছেন ঠিকাদার। অফিস পক্ষে থাকায় এলসি ভাঙা পাথরের পরিবর্তে স্থানীয় গোটা পাথর ব্যবহারের সময় প্রতিবাদ জানালেও লাভ হয়নি। একপর্যায়ে এলাকার লোকজন সড়কের কয়েক স্থানে হাত দিয়ে কার্পেটিং উঠে যাওয়া ও বিটুমিন গলে যাওয়ার দৃশ্য দেখান।

তাদের অভিযোগ, ঠিকাদার ও পাউবো প্রকৌশলীদের যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও ইরানি বিটুমিন দিয়ে সড়কটি তড়িঘড়ি করে সংস্কার কাজ শেষ করেছেন। মাত্র ৫ থেকে ৬ দিনে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কাজ করে শতভাগ কাজ সম্পন্ন দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।

মিনি ট্রাকচালক খাদিমুল করিম বলেন, গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন সড়কে পণ্য নিয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু এমনভাবে পিচ গলতে কখনো দেখিনি। এ অবস্থায় সড়কে যানবাহন চালালে দ্রুত টায়ার নষ্ট এবং যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

অটোভ্যান চালক হেলাল উদ্দিন বলেন, সাতদিনেই সড়কের পিচ গলে উঠে যাচ্ছে। কার্পেটিং করার পর সড়কে অনেক উঁচু নিচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা করতে পারে।

ডিমলা উপজেলা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ায় ব্যবহৃত বিটুমিনের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিস কর্মকর্তারাও।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাব ঠিকাদার লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, রাস্তার কিছু জায়গায় বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে। ফলে রোদের তাপে এ রকম হচ্ছে। দরপত্রের কার্যাদেশ অনুযায়ী সড়কটির সংস্কারকাজ করা হয়েছে। তাছাড়া কাজ চলাকালে সার্বক্ষণিক ছিলেন অফিসের লোকজন।

ডালিয়া পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাশেম জানান, বিটুমিন গলে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।

ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বর্তমান যে তাপমাত্রা, এতে কোনোভাবেই বিটুমিন গলে যাওয়ার কথা নয়। সরেজমিনে পরিদর্শন করে অনিয়ম পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করেন তিনি।