• শুক্রবার ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২২ ১৪৩১

  • || ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

হচ্ছে কর্মসংস্থান, কমছে পরিবেশ দূষণ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৪  

যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিকের পণ্য পরিবেশ দূষণ করছে। তবে নীলফামারীর বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এসব প্লাস্টিক সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ কমছে, তেমনি অনেকেরই হচ্ছে কর্মসংস্থান। এ খাতে প্রায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারী জেলায় তিন শতাধিক ছোট-বড় প্লাস্টিকের কুচি তৈরির কারখানা রয়েছে। প্রতিটি কারখানায় প্রতিদিন কাজ করেন ৪০-৫০ শ্রমিক। আর এসব কারখানায় প্লাস্টিকের পুরোনো বোতল, স্যালাইনের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের কভার, সিরিঞ্জসহ বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্য মেশিনে ভেঙে তৈরি করা হয় কুচি। এসব কুচি সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন বড় বড় প্লাস্টিকের কারখানায়। বিদেশেও রপ্তানি করে আয় হয় বৈদেশিক মুদ্রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল, ভাঙা প্লাস্টিক বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্লাস্টিক কুচি শুকাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। আবার কেউ কেউ সেই স্তূপ থেকে একদিকে বোতল, কোথাও স্যালাইনের ব্যাগ, কোথাও সিরিঞ্জ, কোথাও বোতলের ছিপি ভাগ করে রাখছেন। আর এসব পণ্য মেশিনে ভেঙে তৈরি করা হবে কুচি।

সদর ইটাখোলা বাদিয়ার মোড় কারখানায় কাজ করার সময় কথা হয় নারী শ্রমিক কেয়া রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে সারাদিন প্লাস্টিকের দ্রব্য বাছাই করে ভাগ করে রাখি। আর এখান থেকে নিয়ে মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় কুচি। সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই আড়াইশ টাকা। তবে আগে বাড়িতে সংসারের কাজ করতাম আর বসেই থাকতাম। অনেক অভাব ছিল। বর্তমানে সংসারে অভাব নেই বললেই চলে।

কবিতা রানী নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, আগে সংসারে অভাব ছিল। বর্তমানে এখানে কাজ করে যা পাই তা দিয়েই আমার সংসার ভালোই চলছে।

কারখানার মেশিনচালক বিকাশ চন্দ্র রায় বলেন, শ্রমিকরা প্লাস্টিকের পণ্যগুলো ভাগ করে রাখেন। সেসব দ্রব্য নিয়ে এসে মেশিনে দিয়ে কুচি তৈরি করা হয়। এরপর এসব কুচি ওয়াস মেশিনে পরিষ্কারের পর রোদে শুকানো হয়। পরে বস্তায় ভরে প্যাকেট জাত করা হয় বিক্রির জন্য।

কুলছুম বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ায় অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতাম। তিন সন্তানকে নিয়ে এক বেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে কোনো রকমে দিন কাটতো। কিন্তু এখন প্লাস্টিক বর্জ্য কারখানায় কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছি।

কারখানার মালিক কমল রায় বলেন, বিভিন্ন ভাঙারির দোকান ও হকারদের কাছ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পণ্য কাঁচামাল হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। কুচিগুলো আমরা মিলারদের কাছে বিক্রি করে থাকি। কুচির আবার বিভিন্ন নাম রয়েছে। আর এই বোতলের কুচি যায় বিদেশে।

ইলিয়াস হোসেন নামের আরেক প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী বলেন, পথে-ঘাটে এবং নালা-নর্দমায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে এনে এগুলো পরিষ্কার করে আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় প্লাস্টিকের গুটি। এরপর নতুন করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় নানা পণ্য। এখানে দুই-তিন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকে।

পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবেশের উপকার করছে দাবি করে তিনি বলেন, কোটি কোটি বোতলসহ প্লাস্টিক বর্জ্য যদি খাল, নদী দখল করত, তাহলে তা পলিথিনের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠত।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল আহকাম সরকার বলেন, বর্তমান প্লাস্টিক বেশি ব্যবহারের কারণে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবে দিন দিন ফসল কমে যাচ্ছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে কুচি তৈরি হওয়ার কারণে পরিবেশ রক্ষা পাবে। প্লাস্টিকের কুচি পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নীলফামারীর সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মণ বলেন, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পরিবেশ তার দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। পাশাপাশি এসব কারখানায় কাজ করে অনেকেই হচ্ছেন স্বাবলম্বী।