• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাপার দুর্গ বলে পরিচিত রংপুর কার, জিএম কাদের না রওশনের?

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির একটি অংশের নেতারা। এ নিয়ে দলটির ভেতরে শুরু হয়েছে টানাপড়েন। এ ঘটনায় গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রওশনপন্থীদের প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে রংপুর জাপার শীর্ষ নেতাদের একাংশ। আর অন্য একটি অংশ এইচএম এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনকে মাথায় রেখে ‘কিছু সময়ের জন্য’ রওশনকে দলের চেয়ারম্যান মানতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া, অপর একটি অংশ পক্ষ-বিপক্ষে নেই জানিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা চায় না বলে মত দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, জাপার দুর্গ বলে পরিচিত রংপুর কার—জিএম কাদের না রওশনের?

রংপুর জাপার জিএম কাদেরের পক্ষের নেতাদের ভাষ্য, তারা রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান মানেন না। যারা রওশনকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছেন, তারা দলের ‘ভুঁইফোড়’ নেতা। জিএম কাদের ছাড়া কাউকে দলের চেয়ারম্যান মানেন না জানিয়ে রংপুর জাপার নেতারা রওশনপন্থীদের প্রতিহতেরও ঘোষণা দিয়েছেন।

গত এপ্রিলে অসুস্থ থাকা অবস্থায় এরশাদ তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। গত ১৪ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। তার মৃত্যুর চারদিন পর ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এরপর ২৩ জুলাই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে অস্বীকার করে বিবৃতি দেন রওশন এরশাদসহ দলের সাতজন সংসদ সদস্য ও দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।

এ নিয়ে রংপুর জাপার নেতারা বলছেন, জীবিত অবস্থায় এরশাদই তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান বলে ঘোষণা দিয়ে গেছেন। এ অবস্থায় রওশনকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা এইচএম এরশাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।

এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি রংপুর সিটি মেয়র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান কে হবেন, এটা তো এরশাদ ঘোষণা দিয়ে গেছেন। আমরা জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানি; রওশন এরশাদকে মানি না। রংপুর অঞ্চলের নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা রাখে। এখানে রওশন এরশাদের কোনও আদেশ-নির্দেশ মানা হবে না।’ সিটি মেয়র আরও বলেন, ‘রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণাকারী ভুঁইফোড় নেতারা রংপুরে এলে তাদের প্রতিহত ও প্রতিরোধ করা হবে।’

দলের মধ্যে বিভাজন নিয়ে প্রায় একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানান মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির। তিনি বলেন, ‘যারা রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন, তারা দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কথা বলেছেন। রওশনকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেওয়া ঠিক হয়নি।’

এ ব্যাপারে জেলা জাপার সভাপতি ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত মানি না। আমরা এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানি। রওশনের কথায় নয়, এরশাদের ভাই জিএম কাদেরের কথায় দল চলবে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি দাবি করেন, ‘রংপুরসহ পুরো বিভাগে রওশন এরশাদের পক্ষে একজন নেতাকর্মীও খুঁজে পাওয়া যাবে না; সবাই জিএম কাদেরের পক্ষে।’

এদিকে, জিএম কাদের বা রওশনের পক্ষে বা বিপক্ষে নেই জানিয়ে রংপুর জেলা জাপার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি রংপুর সদর আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী। আমরা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা একেবারেই সহ্য করবো না।’

শুধু আব্দুর রাজ্জাক নন, তার মতো আরও অনেককে পাওয়া যায়; যারা পক্ষ বা বিপক্ষে না গিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা চান না বলে জানান। তবে তারা এ প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।

এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়েও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে জাপায়। জিএম কাদেরপন্থীরা চান, এরশাদের ভাই বা স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কেউ নির্বাচন করুক। আর রওশনপন্থীরা চান, এ আসনে এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহিরকে (সাদ এরশাদ)।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুরের রওশনপন্থীরা জানান, জিএম কাদের তো বেশ কিছুদিন ধরেই দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এখন এ দায়িত্ব রওশন এরশাদ কিছুদিন পালন করতেই পারেন। এতে একদিকে দলের বিশৃঙ্খলাটা দূর হবে। আবার চেয়ারম্যান হিসেবে কে বেশি যোগ্য—কাদের না রওশন, তাও প্রমাণ হবে।

এদিকে, রংপুর সদর আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, রওশন এরশাদ তার ছেলে শাদকে প্রার্থী করতে অনেকদিন ধরে তাদের চাপ দিয়ে আসছেন। আর এরশাদ পরিবারের তিন সদস্য—ভাতিজা আসিফ শাহারিয়ার, ভাগ্নি টুম্পা ও এরশাদের আমেরিকাপ্রবাসী ভাই ওপেলও মনোনয়ন চাইছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা আসনটিতে দলের ত্যাগী কোনও নেতাকে দেখতে চান; শাদ এরশাদকে প্রার্থী করার ব্যাপারে তাদের কোনও আগ্রহ নেই ।

রওশনকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণার বিষয়ে এরশাদ পরিবারের কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি নিজেও রংপুর সদর আসনের উপ-নির্বাচনে একজন প্রার্থী। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো।’