• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৬ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

রংপুর-৩ আসনে ভোটের লড়াই করতে চায় স্থানীয় আ. লীগ

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

রংপুর-৩ আসন, রংপুর সদর উপজেলা ও নগরের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ে গঠিত। আসনটিকে শুধু রংপুর নয়, উত্তরাঞ্চলের রাজনীতির কেন্দ্র মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতারা। এখানে জাতীয় পার্টির আধিপত্যের কারণে অনেকটাই কোণঠাসা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ার পর উপনির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সরব হয়ে উঠেছে। তারা মনে করছে, এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টির মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে যে অস্থিরতা চলছে তার সুযোগ নিয়ে আসনটি নিজেদের কবজায় আনা যাবে। সে কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিলেও এবার স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থী দেওয়ার জন্য মরিয়া।

রংপুরের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছে, সারা দেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাপট থাকলেও রংপুর মহানগরে ভিন্ন চিত্র। জাতীয় পার্টির আধিপত্যের কারণে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাজনীতির মাঠে বেকায়দায় রয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছে, এবারও যদি নৌকা মাঠে না থাকে, কর্মীরাও মাঠে থাকবে না। পাশাপাশি উপনির্বাচনেও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না।

স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দিলে উপনির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। নৌকা ছাড়া নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়বে।

রংপুর-৩ উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৫ অক্টোবর। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আগামীকাল ৯ সেপ্টেম্বর। উপনির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে এবং দলের নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে কোন্দল চলছে। এরশাদের পরিবারও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সমর্থকরা দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরকে প্রার্থী করা হচ্ছে। অন্যদিকে রওশনপন্থীরা প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত নির্বাচন কার্যালয় থেকে কোনো দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।

জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, এবারও জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি প্রার্থী দিলেও আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ধার্য দিনের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন ঘোষণা করা হবে। তবে দলটির কোনো নেতা নাম প্রকাশ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ব্যানারে নির্বাচন করলেও বর্তমানে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টিকে সংসদে আরো শক্তিশালী অবস্থানে দেখতে চাইছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। জাতীয় পার্টির নেতারাও উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, এবার রংপুরে নৌকার ভিত্তি সুদৃঢ় করতেই উপনির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া উচিত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী ১৯৭৩ সালের পর জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে কোনোবারই জয়ী হয়নি। এমনকি অনেকবার তারা প্রার্থীও দেয়নি। বিগত নির্বাচনগুলোয় মহাজোটের স্বার্থে জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ আশায় বুক বেঁধেছে। এবার তারা কোনোভাবেই লাঙলকে ছাড়তে প্রস্তুত নয়।

কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী কালের কণ্ঠকে জানান, উপনির্বাচনে জাপাকে যদি ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী রাজনীতির মাঠে থাকবে না। নির্বাচনেও সহযোগিতা করবে না।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য  চৌধুরী খালেকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপনির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, রংপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থীর দাবি ততই তুঙ্গে উঠছে। আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ তৃণমুলের নেতাকর্মীসহ এলাকার উন্নয়নকামী মানুষ। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সংসদ থাকলে উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে।’

জানা গেছে, রংপুরে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই রয়েছে। মহাজোটে থাকলেও দুটি বড় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সদ্ভাব নেই। আন্তরিক সম্পর্কও নেই। সিটি করপোরেশনের মেয়র জাতীয় পার্টির হওয়ায় সেখানেও আওয়ামী লীগের তেমন জায়গা নেই।

মনোনয়নপ্রত্যাশী রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে রংপুরে আওয়ামী লীগ অবহেলিত। এবার আওয়ামী লীগের জয়ের তুমুল সম্ভাবনা রয়েছে। এবার উপনির্বাচনে আমরা যদি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিই, তৃণমূলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। হতাশ হয়ে পড়তে পারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।’

অন্যদিকে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে কোন্দল রয়েছে। দল প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও যাঁরা বঞ্চিত হবেন তাঁদের মাঠে নামানো কঠিন হতে পারে। এর আগে প্রার্থী নিয়ে কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পক্ষে মাঠে ছিল না দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী। ফলে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এবার উপনির্বাচনেও মনোনয়নবঞ্চিতরা নিজেদের গুটিয়ে রাখলে নৌকার প্রার্থী বেকায়দায় পড়বে।

অবশ্য মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যাকে নৌকা দেবেন, আমরা তাঁর পক্ষেই কাজ করব।’

আওয়ামী লীগ না থাকলে নির্বাচন যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না, তেমনি ভোটারদের কেন্দ্রে নেওয়াও কঠিন হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর সদর আসনে ভোট পড়েছিল ৫২ শতাংশ। অনেকেই বলছে, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা না থাকায় ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। এবারও যদি আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকে, ভোটার উপস্থিতিও কমে যাবে। স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ আসনই উত্তরবঙ্গের কেন্দ্র। কোনোভাবেই কেন্দ্র হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। যদি প্রার্থী না দেয়, তাহলে তৃণমূলে বিরূপ প্রভাব পড়বে। হতাশ হয়ে পড়বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কমে যেতে পারে।’