• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

ধরলা-তিস্তার পানিতে ভাসছে পুরো লালমনিরহাটের জনপদ

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০১৯  

ধরলা ও তিস্তা নদীর পানিতে ভাসছে পুরো লালমনিরহাটের জনপদ। জেলার পাঁচ উপজেলার ২১ ইউনিয়নের প্রায় ৯০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ গত আটদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন। তলিয়ে রয়েছে এসব এলাকার ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, নলকূপ ও ফসলের ক্ষেত। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বানভাসিরা।

অনবরত প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে আরো বেড়েছে ধরলার পানি। সকাল থেকে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কাউনিয়া পয়েন্টে রয়েছে বিপদ সীমার দুই সেন্টিমিটার উপরে। ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অবনতি হয়েছে লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বানের পানিতে ভেসে গেছে ঘর, আসবাবপত্র, ফসল, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী খুনিয়াগাছ গ্রামের বানভাসি কাদের আলী (৬৭) জানান, তারা গত আটদিন ধরে বানের পানিতে বন্দি হয়ে অমানবিক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কোনো রকমে শুকনো খাবার খেয়ে চলছে তাদের। “আমরা ত্রাণের জন্য কাঙ্গাল নই, আমরা তিস্তা নদীতে বাঁধ চাই তাহলে আমরা শান্তিতে বাস করতে পারবো,” বললেন কাদের আলী।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন জানান, বানভাসিরা চরম দুর্ভোগে-কষ্টে আছেন। “আমরা বানভাসিদের পাশে যাচ্ছি। সাধ্যমত সহযোগিতা করছি,” যোগ করেন তিনি।

সরকারিভাবে ত্রাণ সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে দুর্গত এলাকার বানভাসিদের তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বানভাসিরা ত্রাণের কাঙ্গাল না হয়ে তারা তিস্তা নদীর বাম তীরে স্থায়ী বাঁধের দাবি করছেন। বাঁধ নির্মিত হলে তারা স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবেন তিস্তার গ্রাস থেকে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়শ্রী রানী রায় জানান, যেহেতু বানভাসি মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি তাই আরো বেশি সরকারি বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। “বানভাসিদের ত্রাণের প্রয়োজন আছে কিন্তু বানভাসিরা একটাই দাবি তুলছেন। তা হলো: তারা ত্রাণ চান না, চান তিস্তার বাম তীরে বাঁধ,” এমনটি জানালেন ইউএনও।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম ও জেলা শিক্ষা অফিসার আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বানের পানি উঠায় জেলার ৩১টি প্রাথমিক ও ১১টি উচ্চ বিদ্যালয়ে সাময়িক পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশুরা নৌকা চড়ে যাতায়াত করছে। অনেক অভিভাবক এতো ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাচ্ছেন না। এছাড়াও, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বানভাসিরা আশ্রয় নিয়েছেন।

”বানের পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত দুর্গত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পুনরায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হবে না,” জানান জাহাঙ্গীর আলম।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম জানান, তিস্তার পানি কমলেও বেড়েছে ধরলার পানি। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। “তিস্তায় পানির লেভেল আকস্মিকভাবে উঠা-নামা করছে। ভাটিতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও বেড়েছে তাই দুর্গত এলাকাগুলো থেকে বানের পানি তেমন সরছে না,” জানান তিনি ।