• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুর্গতদের জন্য সরকারি সহায়তা বরাদ্দ

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৯  

উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিবিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। অনেক স্থানে সরকারি অফিস আদালতও প্লাবিত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

বন্যা দুর্গতদের জন্য সরকারি সহায়তা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কবলিত এলাকাগুলোতে জেলা প্রশাসন থেকে খাবার ও নগদ অর্থ দেয়া হচ্ছে দুর্গতদের মাঝে।

এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় থাকায় আগামী ২ থেকে ৩ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী রোববার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে এখনই  বর্ষা-বন্যাজনিত দুর্যোগের অবসান হচ্ছে না।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি স্থিতিশীল হলেও তীব্র ভাঙনের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রৌমারীর বন্দরের এলাকায় এলজিইডি’র সড়ক ভেঙে যাওয়ায় গোটা উপজেলা এখন পানিবন্দী। এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও বেসরকারি পর্যায়ের সংগঠনগুলো এগিয়ে না আসায় বানভাসিরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়িতে আটকে পরা মানুষগুলো জ্বালানি সংকটের কারণে রান্না-বান্না করতে পারছেন না।

এছাড়া চিলমারী খাদ্য গুদাম ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সাব-স্টেশনে পানি প্রবেশের উপক্রম হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ পরিচালনা রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল হক।

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এতে গাইবান্ধা পৌর এলাকাসহ চারটি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী মানুষ এবং বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত বন্যার্ত মানুষেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গাইবান্ধা পৌর এলাকায় ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে ৪ হাজার বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এদিকে গত দু’দিনদিনে সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের গোদারহাট এলাকার সোহাগ (৫) বন্যার পানিতে ডুবে ও সাঘাটার কুন্ডুপাড়ায় উজ্জল কুমার (১৫) সর্প দর্শনে মারা যায়।

এদিকে চরাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। বিশেষ করে গবাদিপশু যেগুলো চরাঞ্চলে আটকা পড়েছে সেগুলো যানবাহনের অভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। এছাড়া গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। 

শত বছরের রেকর্ড ভেঙে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই তথ্য জানিয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্রুত গতিতে এই পানি বৃদ্ধির ফলে যেকোন মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

বগুড়া জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১০২টি গ্রাম পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। ৮২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়ে ২ হাজার পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া আরো ২০ হাজার পরিবার সরে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে। জেলা শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যায় তিন উপজেলার ৬৪টি প্রাথমিক ও ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের ২২টি ইউনিয়নের ১০১টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিজ্ঞান শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা, পুংলী, ঝিনাই, বংশাই ও ধলেশ্বরীর নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।