• শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৩ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

করোনা থেকে বাঁচার উপায় চীনা স্পর্শত্যাগ 

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

চীনে করোনাভাইরাস মহামারীর আকার নিয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভারতে। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। এরইমধ্যে চিনে ১৩২ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার জন। ভারত এরই মধ্যে ‘লাল সতর্কতা’ জারি করেছে। সবগুলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করেছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে কেরালায় চারজন, মুম্বাইয়ে দুইজন এবং ব্যাঙ্গালুরু ও হায়দ্রাবাদে একজন করে মোট দুইজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তারা সবাই সম্প্রতি চীন ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পর তাদের শরীরে নতুন এ ভাইরাসের ‘কিছু উপসর্গ’ লক্ষ্য করা যায়। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুতি নিয়েছে। হাসপাতালটি পৃথক নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ও শয্যা প্রস্তুত রেখেছে। ভারত থেকে চীনগামী সব বিমান বন্ধ করা হয়েছে। জাহাজ বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের পরে বন্দরে প্রবেশের অনুমতি মিলছে। চীনফেরৎ যাত্রীদের কিছুসময় আইসোলেশনে রেখে পরীক্ষার পরে ছাড়া হচ্ছে। বাংলাদেশে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। থার্মাল টেস্টের পরে ছাড়া হচ্ছে চীনফেরৎ যাত্রীদের। শহর কলকাতায় করোনাভাইরাস নিয়ে নয়া নির্দেশিকা দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। শহরের সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জরুরী সতর্কতার নির্দেশ কলকাতা পুরসভার। তৈরি রাখা হয়েছে কলকাতার বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতাল। এককথায় নিঃশব্দে ভারত তৈরি হয়েছে এই মহামারীর মোকাবিলায়।

চীনের উহান শহরের এক খাবারের দোকান থেকে সারাবিশ্বের আতংক হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস। ভাইরাসটি এখন চীন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বব্যাপি। আগে দেখা যাক ভাইরাসটি কী?

করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ মুকুট। কারণ ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটি দেখতে অনেকটা মুকুটের মত। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি রয়েছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতই। সর্দি কাশি, জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। তাপমাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায়। নাক দিয়ে জল পড়া। হাঁচি, গলা খুসখুস, মাথা ব্যথা। গা হাত পা ব্যথা। শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। করোনাভাইরাস এর কোনো ওষুধ বা চিকিৎসা নেই। ভাইরাসনাশক ওষুধের সংখ্যা খুবই কম। তবে এই ভাইরাস প্রতিরোধে আগে থেকেই কিছু ব্যবস্থা নেয়া দরকার। যেমন ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া এবং টিস্যু ব্যবহার করা। অবশ্যই মাস্ক পরে থাকা। এটি আসলে ফ্ল্যাবিও ভাইরাস, যা দ্রুত সংক্রামিত হয়। চিনের ইউহানের প্রথম করোনা সংক্রণের ঘটনা নজরে আসে। তারপর থেকে নতুন নতুন জায়গাতেও ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে চলেছে। মূলত গবাদি পশু থেকে ছড়ায় বলে করোনার ক্ষেত্রে বিপদ অনেক বেশি। পশু-পাখি ও গবাদি পশুর সংস্পর্শে থাকা মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। পশুর লোম, মল থেকেই এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা বেশি।

চীনের করোনাভাইরাসের দাপট যেন ‘রেসিডেন্ট ইভিল’ সিনেমার বাস্তব প্রতিফলন। ছয় সিরিজের ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০০২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দফায় দফায়। জৈব রাসায়নিক অস্ত্র এবং জেনেটিক‌্যাল মিউটেশন কিভাবে মানব সভ‌্যতার ধ্বংস ডেকে আনবে তা দুর্দান্তভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে এই বিখ‌্যাত সায়েন্স ফিকশন এবং হরর থ্রিলার ছবিতে। ছবিতে দেখানো হয়েছে গোপন গবেষণাগারে তৈরি ‘টি’ ভাইরাস ও ক্লোনিং প্রক্রিয়া বিভিন্ন নিরীহ প্রাণী ও মানুষের উপর প্রয়োগ করে প্রথমে তাদের জিনগত অভিযোজন ঘটাচ্ছে। দুর্ঘটনাবশত এই গবেষণা বুমেরাং হয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ টি-ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জম্বিতে পরিণত হয় এবং গবেষকদের দোষেই মানব সভ‌্যতা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় দুনিয়া থেকে।

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে রেসিডেন্ট ইভিল সিনেমার ভয়ানক প্রতিফলনই দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। কারণ, দুটি দাবি ঘিরে চাঞ্চল‌্য ছড়িয়েছে দুনিয়া জুড়ে। প্রথমটি হল ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সন্দেহ করেছে, রহস্যময় ‘নোভেল করোনাভাইরাসের’ চাষ করেছে চীনের গোপন সামরিক গবেষণাগার। দ্বিতীয় দাবি, মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট এই দাবিকেই সমর্থন করেছে। ইজরায়েলের জীবাণু অস্ত্রের বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এই ভাইরাসের জন্মদাতা ইউহানের জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা বায়ো-সেফটি লেভেল ৪ ল্যাবোরেটরি। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, অসাবধানতাবশত এই গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ। আসলে জৈব রাসায়নিক অস্ত্রের উপর গবেষণা করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। ইজরায়েলের সেনা গোয়েন্দাদের উদ্ধৃত করে সে দেশের দুটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর ব‌্যাপক আধুনিকীকরণ, ছাঁটাই প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন করছে চীন । চলছে জীবাণু অস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্র নিয়েও গবেষণা। এরই অঙ্গ হিসাবে সার্স জাতীয় ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছে চীনের সামরিক বাহিনীর গবেষণাগার।

সার্সের পুরো নাম, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম। জ্বর, হাঁচি, কাশি, শরীরে অসহ‌্য ব‌্যথার মতো উপসর্গ থাকে এই রোগে। পরিণতি ভয়ংকর মৃত্যু। সার্সের মতোই আরেকটি নয়া ভাইরাস হল নোভেল করোনাভাইরাস। এটি আরও মারাত্মক এবং শক্তিশালী। মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট ও ইজরায়েলের মোসাদের দাবি, শত্রুদেশ দখল করতে, বিনা রক্তপাতে শত্রু সেনাদের খতম করতে অনেকদিন ধরেই জীবাণু অস্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে চীনের লাল ফৌজ। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশেই এই গবেষণা চলছে। কিন্তু এই গবেষণা যে দুর্ঘটনাবশত বুমেরাং হয়ে যাবে এবং দেশজুড়ে মহামারীর আকার নেবে তা ভাবতে পারেননি গবেষকরা। ভাইরাসের দাপটে চীনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

নানা মহলের দাবি, রহস‌্যময় এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে উহান প্রদেশের গোপন গবেষণাগার থেকেই। কোনো কোনো মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, নাশকতা বা অন্তর্ঘাত করেই চীনের কোনো বিজ্ঞানী বা গুপ্তচর এই ভাইরাস ছড়িয়েছেন।

ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্ট জানিয়েছে, এই আরএনএ ভাইরাসকে চীন তৈরি করেছে মারণাস্ত্র হিসেবেই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ছোবলে হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা সম্ভব। উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল অনেকদিন ধরেই।

ইজরায়েলের দাবি, বিশ্বের সব দেশকে জব্দ করতে, চাপে রাখতে সবচেয়ে শক্তিশালী জীবাণু অস্ত্র বানাচ্ছে চীন। এজন‌্যই জিনগত অভিযোজন ঘটিয়ে করোনাভাইরাসের মতো অনেক ভাইরাস তৈরি করছেন চীনের সামরিক বাহিনীর গবেষকরা। ইজরায়েলি সেনা গোয়েন্দা দফতরের প্রাক্তন প্রধান লেফটেন্যান্ট ড্যানি শোহাম জানিয়েছেন, ‘বায়ো-ওয়ারফেয়ার বা জীবাণু যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে চীন। জিনের কারসাজিতে এমন ভাইরাস তৈরি করা হচ্ছে যা মিসাইল, ড্রোন, বোমা বা সামান‌্য একটি পেন অথবা ঘড়ির মধ্যে দিয়েই ছড়িয়ে দেয়া যায় শত্রুর ভূখণ্ডে। সেই ভাইরাসের দাপটে ২৫ দিনের মধ্যেই মৃত্যুমিছিলে উজাড় হয়ে যেতে পারে একটি বড় শহর বা একটি জেলা।’ মার্কিন সংবাদমাধ‌্যম ও ইজরায়েলের গোয়েন্দাদের দাবি ভিত্তিহীন জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে চীন। কিন্তু ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসাবে কোনো টিকা, ওষুধ বা ইঞ্জেকশন কাজ না করায় সন্দেহ তির রয়েছে চীনা গবেষণাগারের উপরেই।

দায়ী যেই হোক এখন আমাদের বাঁচার পালা। চীনা স্পর্শকে কোয়ারান্টাইন বা বিচ্ছিন্ন করা ছাড়া উপায় নেই। এপ্রসঙ্গে সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য দিয়েছেন জনৈক বাঙালি চিকিৎসক। তিনি পরিষ্কার বলেছেন যে অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তার আগে বাজার থেকে চীনা সামগ্রী যা জীবনধারণের জন্যে অবশ্যম্ভাবী নয় তা তুলে আপাতত শোধন করা হোক এবং এখন কোনো সামগ্রী যা অবশ্যম্ভাবী নয় তার আমদানি বন্ধ হোক। ব্যাপারটি অত্যন্ত কঠিন। তবে সরকার উদ্যোগ নিলে ও ক্রমাগত প্রচার করলে কাজটা করা সম্ভব হবে। কিন্তু ব্যবসায়িক কারণে এই ব্যবস্থা চালু থাকলে ভবিষ্যতে মহামারীর আকার নিতে পারে এই ভাইরাস।
লেখক-অমিত গোস্বামী