• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

পরাজয়ে শেষ হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০১৯  

সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু উৎসবের। কিন্তু খুব কাছে গিয়েও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার, শ্রীলঙ্কা ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া, আর কয়েক ম্যাচে লড়াই, আস্তে আস্তে মলিন হওয়া শুরু স্বপ্নের। ভারতের কাছে হেরে তো নিভে গেছে শেষ আশাটুকুও। পাকিস্তানের কাছে ৯৪ রানে ম্যাচ হাতছাড়া করে শেষে বিষণ্ণতার ষোলোকলাই পূর্ণ বাংলাদেশের।

সমীকরণের বিশাল মারপ্যাঁচ মাথায় নিয়ে ঐতিহাসিক লর্ডসে ৩১৫ রান তুলেছিল পাকিস্তান। এই রান তুলেও তাদের সেমির সবরকম সম্ভাবনাই শেষ। আর বাংলাদেশের স্বপ্ন তো আগেই ভেঙেছে। যেটা করা যেত তা হল, শেষটা জয়ে রাঙানো। কিন্তু শেষ স্বান্ত্বনাটুকুও পাওয়া হল না। ২২১ রানে অলআউট হয়ে আপাতত টেবিলের সাতে টাইগাররা। মাশরাফীর শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে মিলল বড় হারই।

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩৩০ করে ২১ রানের জয়। বাংলাদেশের শুরুটা কী অনিন্দ্য সুন্দর, স্বপ্নময় রঙ্গিনই না ছিল। ওই ম্যাচ দিয়েই ঘুম ভেঙেছিল ম্যাড়ম্যাড়ে বিশ্বকাপের। পরে একমাত্র ইংল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হারা ছাড়া প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছে টিম টাইগার্স। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে কাঁপিয়েছে, কাড়তে বাধ্য করেছে নজর। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২১ তাড়া করে দাপুটে জয়, এই বিশ্বকাপে এতরান তাড়া একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া করতে পারেনি কেউই!

পাকিস্তানের বিপক্ষেও ৩১৫ রান তাড়া করতে হত। খুব অসম্ভব কিছু ছিল না, যদি ওপেনাররা একটু বুঝে খেলতে পারতেন। সৌম্য সরকার তার মতো করেই শুরুটা করেছিলেন, ২২ বলে কর যান ২২। শুরুতে একবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন, কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। মোহাম্মদ আমিরের অফস্টাম্পের বাইরের বল উঁচু করে খেলতে গিয়ে পয়েন্টে পড়েন ফখর জামানের হাতে ধরা।

সৌম্য আগেভাগে ফেরায় তামিম ইকবালের কাঁধে দায়িত্ব চাপে বড় এক ইনিংস খেলার। পুরো বিশ্বকাপে নিস্তেজ ছিল তার ব্যাট, একটা চোখ ধাঁধানো ইনিংস বাঁহাতি ওপেনারের কাছে পাওনাই ছিল।

কিন্তু কীসের কী! শাহিন শাহ আফ্রিদির এক স্লো অফকাটারে বোকা বনে গেলেন তামিম ইকবাল। করলেন মাত্র ৮ রান, তাও আবার ২১ বলে। এক হতাশাজনক আসর দিয়ে শেষ হল তামিমের বিশ্বকাপ মিশন।

দুই ওপেনারের ব্যর্থতা বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের কাঁধে। সাকিব তার মতোই খেলে গেলেন, কিন্তু চাপ সইতে পারলেন না মুশি। ওয়াহাব রিয়াজের অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে এনে ১৬ রানে নিজেই ভাঙলেন নিজের স্টাম্প।

৭৮ রানে ৩ উইকেট। ব্যর্থ টপঅর্ডার। বাধ্য হয়ে তাই পুরো আসরের মতো এবারও দলের ভার বইতে হল সাকিবকে। সঙ্গী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের জয়ের পার্শ্বনায়ক লিটন দাস। দুজনের জুটি ফিফটি পেরনোর পর মনে হল এবারও কিছু হতে চলেছে।

কিন্তু ৫৮ পেরনোর পর লিটনই ভাঙলেন জুটি। ৪০ বলে ৩২ রান করে শাহিন শাহ আফ্রিদির স্লোয়ারে কাভারে হারিস সোহেলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন দলকে মহাবিপদে রেখে।

বিপদ চূড়ান্ত পর্যায়ে দাঁড়াল ৩৩তম ওভারে শাহিন আফ্রিদির আরেক ছোবলে। দানবীয় পেসারের গতিময় পেসে পরাস্ত হয়ে সরফরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন সাকিব আল হাসান। ৭৭ বলে ৬৪ রান করে ফিরলেন অসংখ্য কীর্তি গড়ে।

এই বিশ্বকাপে এমন এক উচ্চতায় চলে গিয়েছেন সাকিব, তাকে ছোঁয়া বা পেছনে ফেলা প্রায় দুঃসাধ্যই হয়ে উঠতে পারে অন্যদের জন্য! বিশ্বকাপে তার ৬০৬ রান হয়ত ছুঁয়ে ফেলবেন অনেকেই, কিন্তু ৮ ইনিংসে সাতবার পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস? কিংবা ৬০০ রানের সঙ্গে ১১ উইকেট, কয়জন অলরাউন্ডারের পক্ষে সম্ভব? কেবল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১ রানে আউট হওয়াতে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে টানা আট ম্যাচে ফিফটির অসামান্য রেকর্ডে নাম লেখানো হল না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের।

সাকিব ফেরার পর বাকিরা আর কেউই থিতু হলেন না। যিনি পারতেন অসম্ভব কিছু করতে, সেই মাহমুদউল্লাহও ৪১ বলে ২৯ করে ফেরার পর কার্যত ম্যাচ শেষ। বাকিরা দ্রুত আসা-যাওয়ার মাঝে থাকায় ম্যাচটা শেষ হয়ে গেল ৩৫ বল আগেই।

বাংলাদেশের চূড়ান্ত সর্বনাশটা করেছেন শাহিন আফ্রিদি। একাই নিয়েছেন ৩৫ রানে ৬ উইকেট। নিজের তো বটেই, এখন পর্যন্ত চলতি আসরে এটাই সেরা বোলিংয়ের নমুনা। পাকিস্তানেরও সেরা বোলিং।

শুরুতে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মোস্তাফিজও। সেটাও আবার টানা দুই ম্যাচে। ৭৫ রানে ৫ উইকেট নেয়া পারফরম্যান্সটা তার হারের খাতাতেই গেল। ইমাম-উল হক ১০০ করলেন, বাবর আজম করলেন ৯৬। কিন্তু ম্যাচটা আসলে বাংলাদেশ হেরেছে ফিল্ডিংয়ে। একাধিক ক্যাচ ছাড়ার পর পাকিস্তান বড় রান তোলার পরই আসলে হার জাঁকিয়ে বসে টাইগারদের কাঁধে।